ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেল করেও প্রকৌশলীর পদোন্নতি, চসিকে দুদকের অভিযান

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে এক কর্মকর্তা ফেল করার পরও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। আবার এটি জানাজানি হলে ওই প্রকৌশলীর পদোন্নতি বাতিলও করা হয়। সবগুলো সিদ্ধান্তে সই ছিল চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের। এ ঘটনায় বিস্ময় ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে-বাইরে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২০ মে) চসিক কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মুহাম্মদ ইমরানের নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা অভিযান শুরু করেছি। অভিযুক্তরা এখনো অনুপস্থিত। তারা এলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখব।

জানা গেছে, মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করার পরও চসিক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রুপক চন্দ্র দাশকে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২১ এপ্রিল দেওয়া অফিস আদেশ অনুযায়ী, রূপকসহ আরও তিনজনকে এ পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু রূপকের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম- কারণ তিনি ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফেল করেছিলেন।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন মোট আটজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাত্র তিনজন– মু. সরওয়ার আলম খান, জাহাঙ্গীর হোসেন ও ফখরুল ইসলাম। একজন অনুপস্থিত ছিলেন এবং বাকি চারজন ফেল করেন, যাদের একজন রুপক চন্দ্র দাশ।

মৌখিক পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে পাস নম্বর নির্ধারিত ছিল ১০। রুপক পেয়েছেন ৯, যার মধ্যে রয়েছে কারিগরি সদস্যদের দেওয়া ৪ ও অন্যান্য সদস্যদের দেওয়া ৫। অথচ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে পদোন্নতির জন্য প্রার্থীর ন্যূনতম ৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। এ নিয়ম উপেক্ষা করে রূপককে পদোন্নতি দেওয়াকে অনেকেই ‘বিধিভঙ্গ’ ও ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ হিসেবে দেখছেন।

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সই নিয়ে। কারণ একদিকে তার স্বাক্ষরে পরীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে, রুপক ফেল করেছেন। অন্যদিকে পদোন্নতির আদেশেও তার স্বাক্ষর রয়েছে, যেখানে রূপকের নামটিই আছে প্রথমে। এমন দ্বৈত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও মেয়রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে। তীব্র সমালোচনার ডা. শাহাদাত হোসেনের আরেক স্বাক্ষরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী রুপক চন্দ্র দাশের পদোন্নতি বাতিল করেন।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ফেল করেও প্রকৌশলীর পদোন্নতি, চসিকে দুদকের অভিযান

আপডেট সময় : ০১:২৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে এক কর্মকর্তা ফেল করার পরও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। আবার এটি জানাজানি হলে ওই প্রকৌশলীর পদোন্নতি বাতিলও করা হয়। সবগুলো সিদ্ধান্তে সই ছিল চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের। এ ঘটনায় বিস্ময় ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে-বাইরে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২০ মে) চসিক কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মুহাম্মদ ইমরানের নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা অভিযান শুরু করেছি। অভিযুক্তরা এখনো অনুপস্থিত। তারা এলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখব।

জানা গেছে, মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করার পরও চসিক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রুপক চন্দ্র দাশকে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২১ এপ্রিল দেওয়া অফিস আদেশ অনুযায়ী, রূপকসহ আরও তিনজনকে এ পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু রূপকের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম- কারণ তিনি ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফেল করেছিলেন।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন মোট আটজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাত্র তিনজন– মু. সরওয়ার আলম খান, জাহাঙ্গীর হোসেন ও ফখরুল ইসলাম। একজন অনুপস্থিত ছিলেন এবং বাকি চারজন ফেল করেন, যাদের একজন রুপক চন্দ্র দাশ।

মৌখিক পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে পাস নম্বর নির্ধারিত ছিল ১০। রুপক পেয়েছেন ৯, যার মধ্যে রয়েছে কারিগরি সদস্যদের দেওয়া ৪ ও অন্যান্য সদস্যদের দেওয়া ৫। অথচ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে পদোন্নতির জন্য প্রার্থীর ন্যূনতম ৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। এ নিয়ম উপেক্ষা করে রূপককে পদোন্নতি দেওয়াকে অনেকেই ‘বিধিভঙ্গ’ ও ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ হিসেবে দেখছেন।

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সই নিয়ে। কারণ একদিকে তার স্বাক্ষরে পরীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে, রুপক ফেল করেছেন। অন্যদিকে পদোন্নতির আদেশেও তার স্বাক্ষর রয়েছে, যেখানে রূপকের নামটিই আছে প্রথমে। এমন দ্বৈত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও মেয়রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে। তীব্র সমালোচনার ডা. শাহাদাত হোসেনের আরেক স্বাক্ষরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী রুপক চন্দ্র দাশের পদোন্নতি বাতিল করেন।