ঢাকা ০৮:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামিন না দেওয়ায় হট্টগোল, বিচারককে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:০৩:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম আদালতে নাশকতা মামলার ৬ আসামির জামিন শুনানি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। আসামিপক্ষ এবং বাদীপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। শুনানি শেষে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারককে নিয়ে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।

একপর্যায়ে আইনজীবীরা বিচারককে লক্ষ্য করে ফাইল ছুড়ে দেয়। আইনজীবীদের এমন আচরণে বিব্রত হয়ে অন্তত দুইবার এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ হাসানুল ইসলামের আদালতে এসব ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিচারকের অনুরোধে ঘটনাস্থলে আইনজীবী সমিতির নেতারা যান। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) প্রসিকিউশন শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যান। এসময় তারা আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে নগরের সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার ৬ আসামি বৃহস্পতিবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। তারা হলেন- মেঘনা পেট্রোলিয়ম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আয়ুব, সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন প্রকাশ আকবর, অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আলী ও দপ্তর সম্পাদক বাবু রনি কর ও সদস্য রাজীব ধর।

তাদের সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ছিলেন এবং তারা সবাই আগে উচ্চ আদালতে অন্তর্বর্তী জামিন নিয়েছিলেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

মামলাটির এজাহারে উল্লেখ করা হয়, জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম সিটি কলেজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে ভুক্তভোগী মাশফিকুর রহমান শান্ত নামের এক শিক্ষার্থী সদরঘাট থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন। গত ১০ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ২৭ এপ্রিল জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও ওইদিন শুনানি হয়নি। পরে আদালতে ৫ মে জামিন শুনানির জন্য দিন ছিল ধার্য ছিল। ৮ মে পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছিলেন আদালত।

নির্ধারিত তারিখ বৃহস্পতিবার আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, কামরুল হাসান সাজ্জাদ, সফিউল মোর্শেদ, জহুরুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, রফিক আহমেদ, সেলিম উদ্দিন শাহীন, ফয়জুল আমিন, দেলোয়ার হোসেন, নেজাম উদ্দিন, ইকবাল হোসেন, রশিদ বিন জাহেদ ও বেলাল হোসেনসহ অনেকেই। তাদের বেশিরভাগই সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী। এছাড়া বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ও জিয়াউর রহমান জিয়াসহ জামায়াতপন্থী কয়েকজন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুল আলম বলেন, আমার দীর্ঘ ওকালতি জীবনে এমন ঘটনা আর দেখিনি। জামিন দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু আজকে বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামিদের পক্ষ নিয়ে আদালতে জামিন শুনানি করেন। তাদের আবার বেশিরভাগই সরকারি আইনজীবী। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষে সরকারি আইনজীবীরা শুনানি করতে পারেন না। এটির বিধান রয়েছে। আদালতে জামিন নামঞ্জুর করলে বিচারককে ভুয়া এবং উল্টো ফ্যাসিস্টদের দোসর আখ্যা দেয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল বারী বলেন, প্রথম দফা হট্টগোলের খবর পেয়ে আমরা সেক্রেটারির ফোন দেখে মহানগর দায়রা জজ আদালতে যাই। সেখানে আমি বিচারকের খাস কামরায় ঢুকে কথা বলতে চেয়েছিলাম। পরে ভেতরে কে ঢুকবে এটা নিয়েও একটু সমস্যা হওয়ায় আমরা আর ঢুকিনি। পরবর্তীতে আবার বিচারক এজলাসে উঠলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আগ্রাবাদে অবস্থিত মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কার্যালয় থেকে হামিদুর রহমানকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম। তিনি মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার এজাহারভুক্ত এই আসামিকে আটক করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যুবদলের কয়েকজন নেতা তাকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর কার নির্দেশে ডিবি থেকে ছাড়া পেলেন হামিদুর?— শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জামিন না দেওয়ায় হট্টগোল, বিচারককে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য

আপডেট সময় : ০৯:০৩:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম আদালতে নাশকতা মামলার ৬ আসামির জামিন শুনানি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। আসামিপক্ষ এবং বাদীপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। শুনানি শেষে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারককে নিয়ে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।

একপর্যায়ে আইনজীবীরা বিচারককে লক্ষ্য করে ফাইল ছুড়ে দেয়। আইনজীবীদের এমন আচরণে বিব্রত হয়ে অন্তত দুইবার এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ হাসানুল ইসলামের আদালতে এসব ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিচারকের অনুরোধে ঘটনাস্থলে আইনজীবী সমিতির নেতারা যান। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) প্রসিকিউশন শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যান। এসময় তারা আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে নগরের সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার ৬ আসামি বৃহস্পতিবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। তারা হলেন- মেঘনা পেট্রোলিয়ম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আয়ুব, সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন প্রকাশ আকবর, অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আলী ও দপ্তর সম্পাদক বাবু রনি কর ও সদস্য রাজীব ধর।

তাদের সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ছিলেন এবং তারা সবাই আগে উচ্চ আদালতে অন্তর্বর্তী জামিন নিয়েছিলেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

মামলাটির এজাহারে উল্লেখ করা হয়, জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম সিটি কলেজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে ভুক্তভোগী মাশফিকুর রহমান শান্ত নামের এক শিক্ষার্থী সদরঘাট থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন। গত ১০ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ২৭ এপ্রিল জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও ওইদিন শুনানি হয়নি। পরে আদালতে ৫ মে জামিন শুনানির জন্য দিন ছিল ধার্য ছিল। ৮ মে পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছিলেন আদালত।

নির্ধারিত তারিখ বৃহস্পতিবার আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, কামরুল হাসান সাজ্জাদ, সফিউল মোর্শেদ, জহুরুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, রফিক আহমেদ, সেলিম উদ্দিন শাহীন, ফয়জুল আমিন, দেলোয়ার হোসেন, নেজাম উদ্দিন, ইকবাল হোসেন, রশিদ বিন জাহেদ ও বেলাল হোসেনসহ অনেকেই। তাদের বেশিরভাগই সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী। এছাড়া বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ও জিয়াউর রহমান জিয়াসহ জামায়াতপন্থী কয়েকজন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুল আলম বলেন, আমার দীর্ঘ ওকালতি জীবনে এমন ঘটনা আর দেখিনি। জামিন দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু আজকে বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামিদের পক্ষ নিয়ে আদালতে জামিন শুনানি করেন। তাদের আবার বেশিরভাগই সরকারি আইনজীবী। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষে সরকারি আইনজীবীরা শুনানি করতে পারেন না। এটির বিধান রয়েছে। আদালতে জামিন নামঞ্জুর করলে বিচারককে ভুয়া এবং উল্টো ফ্যাসিস্টদের দোসর আখ্যা দেয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল বারী বলেন, প্রথম দফা হট্টগোলের খবর পেয়ে আমরা সেক্রেটারির ফোন দেখে মহানগর দায়রা জজ আদালতে যাই। সেখানে আমি বিচারকের খাস কামরায় ঢুকে কথা বলতে চেয়েছিলাম। পরে ভেতরে কে ঢুকবে এটা নিয়েও একটু সমস্যা হওয়ায় আমরা আর ঢুকিনি। পরবর্তীতে আবার বিচারক এজলাসে উঠলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আগ্রাবাদে অবস্থিত মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কার্যালয় থেকে হামিদুর রহমানকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম। তিনি মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার এজাহারভুক্ত এই আসামিকে আটক করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যুবদলের কয়েকজন নেতা তাকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর কার নির্দেশে ডিবি থেকে ছাড়া পেলেন হামিদুর?— শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।