ভারতের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুঁড়ি করিডোর, যা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত, সেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে এ অঞ্চলে।
৪ এপ্রিল শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম *ইন্ডিয়া টুডে*-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শিলিগুঁড়ি করিডোরে ভারতের সর্বাধুনিক এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, রাফাল যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সামরিক শক্তি স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত ট্যাংক মহড়া ও অস্ত্র চর্চাও চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্তকারী এই করিডোরকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে নয়াদিল্লি। করিডোরটির পাশেই সুকনায় অবস্থিত ‘ত্রিশক্তি কর্পস’-এর সদরদপ্তর থেকে রাফাল ও মিগ যুদ্ধবিমানের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে রাফাল যুদ্ধবিমানের একটি পূর্ণ স্কোয়াড্রন মোতায়েন করা হয়েছে ইতোমধ্যেই।
এছাড়াও, শিলিগুঁড়ি করিডোরে মোতায়েন করা হয়েছে ভারতের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অস্ত্র—এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি এমআরএসএএম ও আকাশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সক্রিয় রাখা হয়েছে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ রুখে দিতে।
*ইন্ডিয়া টুডে*-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যের ওপর গভীর নজর রাখছে ভারত। চীনে সফরকালে ড. ইউনূস ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলকে ‘ল্যান্ডলকড’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের ভূ-অবস্থানের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন। এ মন্তব্যকে ঘিরে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা নতুন করে শিলিগুঁড়ি করিডোর নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামরিক বাহিনী সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কৌশলগত অবস্থান ও প্রতিরক্ষার মানদণ্ডে শিলিগুঁড়ি করিডোরকে দেশের অন্যতম সুরক্ষিত সামরিক অঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে ভারতীয় বাহিনী।
২০১৭ সালে ভুটানের ডোকলাম অঞ্চলে চীনা সেনাবাহিনীর রাস্তা নির্মাণ উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনায় ভারত বাধা না দিলে ডোকলাম হয়ে সহজেই শিলিগুঁড়ি করিডোরে পৌঁছানো সম্ভব হতো চীনের জন্য। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত তার প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্বিন্যাস করেছে এবং করিডোরে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান উত্তরবঙ্গে সামরিক পরিদর্শনে যান এবং করিডোরের সামরিক প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। তিনি আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
শিলিগুঁড়ি করিডোর ভারতের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র ভূখণ্ডভিত্তিক সংযোগপথ। এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এটি নিয়ে ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ এবং সামরিক প্রস্তুতি বরাবরই গুরুত্ব পেয়ে আসছে।