বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য BIMSTEC (বিমসটেক) বা বঙ্গোপসাগরীয় বহুক্ষেত্রীয় প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উদ্যোগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আয়োজিত ষষ্ঠ BIMSTEC শীর্ষ সম্মেলনে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সম্মেলনে BIMSTEC সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার প্রধানরা সম্মিলিতভাবে *”ব্যাংকক ঘোষণাপত্র”* এবং *”BIMSTEC ব্যাংকক ভিশন ২০২৫” গ্রহণ করেছেন। এই ঘোষণা একটি কৌশলগত রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে, যা সংগঠনটিকে টেকসই উন্নয়ন, আঞ্চলিক সংযোগ এবং গভীর অর্থনৈতিক একীকরণের দিকে এগিয়ে নেবে।
সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস BIMSTEC-এর প্রতি বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তিনি আশ্বস্ত করেন, “বাংলাদেশ তার সব নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছি।”
ড. ইউনূস BIMSTEC মুক্তবাজার চুক্তি (Free Trade Agreement – FTA) বাস্তবায়নের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি BIMSTEC-এর *পরিবহন সংযোগ মাস্টারপ্ল্যান* বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা আঞ্চলিক সংযোগ জোরদার করবে এবং বাণিজ্যের নতুন দ্বার খুলবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে BIMSTEC-এর আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি।” তিনি জোর দেন, “জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে BIMSTEC-এর সভাপতিত্ব গ্রহণের পর ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এমন একটি BIMSTEC গড়ে তুলতে চাই যা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, কর্মমুখী এবং মানুষের কল্যাণে নিবেদিত।”
শুক্রবার সকালে ড. ইউনূস থাইল্যান্ডের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠকে মিলিত হন, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে মতবিনিময় হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত BIMSTEC বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম। সংগঠনটি বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি এবং সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।