নিউজ ডেস্ক: শুক্রবার মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেবল মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়কে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেনি, বরং রাজধানী নেপিদো এবং আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে।
রবিবার, ৩০শে মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত, মৃতের সংখ্যা ১,৬৪৪ জনে পৌঁছেছে, যেখানে ৩,৪০৮ জন আহত এবং ১৩৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। মান্দালয়ের রাস্তাঘাট এখন পচা মৃতদেহের দুর্গন্ধে ভরে উঠেছে, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের আর্তনাদ ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে।
ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান পুরোদমে চলছে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, ধসে পড়া সেতু এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা এই প্রচেষ্টায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
শুক্রবার বিকেলে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয়ের কাছে, যার তীব্রতা কেবল মায়ানমার নয়, প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও প্রভাবিত করেছিল।
মান্দালয়ে, বহুতল ভবন ধসে পড়ে এবং প্যাগোডা এবং মঠের মতো ধর্মীয় স্থানগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। নেপিডোতেও অনেক ভবন ধসে পড়েছে। মান্দালয়ের রাস্তায় এখন মৃতদেহের দুর্গন্ধ এতটাই ছড়িয়ে পড়ছে যে স্থানীয় মানুষ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে বের করার জন্য হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এখানে সর্বত্র মৃত্যুর গন্ধ। আমরা জানি না আমাদের প্রিয়জনরা বেঁচে আছে না মারা গেছে।
ভূমিকম্পের প্রভাব ১,৩০০ কিলোমিটার দূরে ব্যাংকক পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল, যেখানে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়ে, ১৮ জন নিহত এবং ৭৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং উদ্ধারকারী দল এখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে বের করার চেষ্টা করছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মায়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে, একটি সম্পূর্ণ শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। “আমাদের বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল ফুরিয়ে আসছে, এবং সরকারি সাহায্য এখনও পৌঁছায়নি,” স্থানীয় বাসিন্দা হান জিন বলেন।
ভূমিকম্পের দুই দিন পর, রবিবার থেকে মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে শুরু করেছে, কিন্তু পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত কঠিন। দেশে চলমান গৃহযুদ্ধ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, ভেঙে পড়া সেতু এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব ত্রাণ কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শনিবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যেম অনেক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ট্রমা কিট, রক্তের ব্যাগ এবং ওষুধের মতো চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে।
চীন, ভারত, রাশিয়া এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলি ত্রাণ সামগ্রী এবং উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। চীন ১৩৫ জনেরও বেশি উদ্ধারকর্মীর সাথে ১৩.৮ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে, অন্যদিকে ভারত দুটি সামরিক বিমান এবং চারটি নৌ জাহাজের মাধ্যমে ১৩৭ টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে।
রাশিয়াও ইয়াঙ্গুনে ১২০ জন উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে। মান্দালয়ে একটি চীনা উদ্ধারকারী দল ৬০ ঘন্টা ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা এক মহিলাকে উদ্ধার করেছে, যা এই দুর্যোগে আশার আলো দেখায়।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মায়ানমার ইতিমধ্যেই গৃহযুদ্ধে ভুগছে, যা দেশটির অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই ভূমিকম্প পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে।
বিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) অভিযোগ করেছে যে সামরিক সরকার দুর্যোগের মধ্যেও সাগাইং অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ত্রাণ কার্যক্রম আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এনইউজি ত্রাণ তৎপরতার জন্য আংশিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে, কিন্তু সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।