আপনি কি জানেন যে দুবাইয়ের যুবরাজ শেখ হামদান তার চতুর্থ মেয়ের নাম রেখেছেন ‘হিন্দ’? কিন্তু কেন এই নাম? এর কি কোন বিশেষ অর্থ আছে? নাকি এই নামটি কেবল রাজকীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ? এই নামের সাথে ইসলামের ইতিহাসের কী সম্পর্ক আছে? আর এটা ভারতের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত? প্রকৃতপক্ষে, দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স এবং বিশ্বব্যাপী ‘ফাজ্জা’ নামে পরিচিত শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম সম্প্রতি তার চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাদের কন্যার জন্ম ২০২৫ সালের ২২ মার্চ এবং তারা তার নাম রাখে “হিন্দ”। এই খবর আসার সাথে সাথেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নামটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল যে শুধু হিন্দ নাম কেন? এর মানে কী? এর পেছনে কি কোন পারিবারিক ঐতিহ্য আছে নাকি কোন বিশেষ কারণ আছে? আসুন এই নামের পেছনের পুরো গল্পটি বুঝতে পারি।
শেখ হামদান কেন এর নাম ‘হিন্দ’ রেখেছিলেন?
শেখ হামদান যখন তার মেয়ের জন্মের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, তখন তিনি কেবল তার নামই প্রকাশ করেননি, বরং একটি প্রার্থনাও লিখেছিলেন। তিনি লিখেছেন: আল্লাহ তাকে তাঁর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয় দান করুন, তাকে আলো ও পথনির্দেশের উৎস করুন এবং তাকে স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধিতে পরিধান করুন। এই প্রার্থনাটি দেখায় যে শেখ হামদানের তার মেয়ের প্রতি কতটা ভালোবাসা এবং স্নেহ রয়েছে এবং এই প্রার্থনার মাধ্যমে তিনি তার মায়ের নাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই নামের পেছনে খুবই আবেগঘন কারণ রয়েছে। আসলে, এই নামটি শেখ হামদানের মা শেখা হিন্দ বিনতে মাকতুম বিন জুমা আল মাকতুমের নাম থেকে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, শেখ হামদান তার মায়ের সম্মানে তার মেয়ের নাম রেখেছিলেন হিন্দ। আরব দেশগুলিতে বাবা-মা বা দাদা-দাদির নামে শিশুদের নামকরণ করা একটি সাধারণ ঐতিহ্য এবং শেখ হামদান যেহেতু তার মায়ের খুব কাছের, তাই তিনি তার মেয়ের নামকরণ করেন তার নামে।
‘হিন্দ’ নামের আসল অর্থ কী?
এখন প্রশ্ন জাগে “হিন্দ” শব্দের অর্থ কী? ইসলামী ইতিহাস অনুসারে, এই নামটি নবী মুহাম্মদের একজন সাহাবীরও ছিল। আরবি ভাষায় ‘হিন্দ’ শব্দের একটি অর্থ উটের দলও। ‘হিন্দ’ শব্দের অর্থ স্ত্রী হরিণও। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, আরবি ভাষায় ‘হিন্দ’ কে ভারতও বলা হয়। তার মানে এই নামটিও ভারতের সাথে যুক্ত! তাই এটি একটি খুব পুরনো, ঐতিহাসিক এবং গভীর অর্থবহ নাম।
শেখ হামদান কে?
যদি তুমি দুবাই জানো, তাহলে শেখ হামদান সম্পর্কেও তোমার জানা উচিত। মানুষ তাকে আদর করে “ফাজ্জা” নামেও ডাকে, যা তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলিতেও দেখা যায়। শেখ হামদান ২০০৮ সাল থেকে দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীও হন। হামদান দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এবং শেখ হিন্দ বিনতে মাকতুম বিন জুমা আল মাকতুমের ছেলে। শেখ হামদান কেবল একজন যুবরাজই নন, তিনি অ্যাডভেঞ্চার, খেলাধুলা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার একজন সুপারস্টারও। তার রাজকীয় জীবনধারা এবং চমৎকার ঘোড়সওয়ারের কথা সারা বিশ্বে আলোচিত।
শেখ হামদানের পরিবার এবং সন্তানরা
২০১৯ সালে, শেখ হামদান তার চাচাতো ভাই শেখা শেখা বিনতে সাঈদ বিন থানি আল মাকতুমকে বিয়ে করেন। তার চার সন্তান। ২০২১ সালের মে মাসে, যমজ কন্যা শেখা এবং পুত্র রশিদের জন্ম হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, তৃতীয় পুত্র মোহাম্মদ বিন হামদানের জন্ম হয় এবং এখন ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, চতুর্থ সন্তান, কন্যা হিন্দের জন্ম হয়। তাহলে এখন তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো যে এই নামের পেছনে কেবল পারিবারিক সম্পর্কই নেই বরং ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আরবি সংস্কৃতির গভীর শিকড়ও রয়েছে।