বিশেষ প্রতিনিধিঃ ভোলায় বিশেষ আবাসন পদ্ধতিতে আধুনিক খাঁচায় দেশি মুরগি পালনের আগ্রহ বাড়ছে নারীদের মধ্যে। এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করলে বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে, পাশাপাশি ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হচ্ছে। ফলে বিলুপ্তপ্রায় দেশি মুরগির সংরক্ষণ যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে অনেক নারী সফল হয়ে বড় খামার করার স্বপ্ন দেখছেন।
ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী এই বিশেষ খাঁচায় দেশি মুরগি পালন করছেন। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও প্রায় তিন শতাধিক নারী একই পদ্ধতি অনুসরণ শুরু করেছেন। বিশেষ আবাসন ব্যবস্থায় দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে মা মুরগি ও বাচ্চাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি মুরগির উৎপাদন চক্র দ্রুততর হচ্ছে, ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই অধিক পরিমাণে ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) এর আওতায় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর কৃষি ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে বিশেষ খাঁচার মধ্যে মুরগির বাচ্চাগুলোকে প্রথম দুই মাস রাখা হয়, যেখানে ইনটেনসিভ ফিডিং ও নির্দিষ্ট সময় অন্তর টিকা প্রদান করা হয়। ফলে বাচ্চাগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নির্দিষ্ট বয়সে উন্মুক্ত করার পর তারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
এই পদ্ধতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মা মুরগিকে বাচ্চাদের থেকে আলাদা রাখা হয়, যার ফলে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই মা মুরগি আবার ডিম উৎপাদনে ফিরে আসে। ফলে একজন নারী একই সময়ে অধিক পরিমাণে ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হন, যা তাকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করে। এই মডেল খামারিদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।
বর্তমানে ভোলার বিভিন্ন এলাকায় ২০টি ক্লাস্টার গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে আধুনিক ও সুপরিকল্পিত উপায়ে দেশি মুরগি পালন করা হচ্ছে। প্রকল্পভুক্ত খামারি পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ইয়ানুর বেগম জানান, নতুন এই পদ্ধতিতে খাঁচার ভেতরে মুরগি রাখায় বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে এবং রোগবালাইও কমেছে। ফলে মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হয়ে উঠেছে।
গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থার উপপরিচালক অরুন কুমার সিনহা জানান, দেশি মুরগির জাত সংরক্ষণ এবং নারীদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন। মুরগি ও ডিম বিক্রির মাধ্যমে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এই মডেল যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে এটি দেশি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। সরকারি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পদ্ধতি সারাদেশে ছড়িয়ে দিলে দেশি মুরগির খামারিরা আরও লাভবান হবেন, যা দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে সমৃদ্ধ করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিশেষ মডেলের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের নারীরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি স্থানীয় পর্যায়ে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।