গাঁজা বিক্রির অভিযোগের মুখে পড়ে বদলি হওয়া নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং তিনি সব কিছুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনায় করেছেন।
তিনি বলেন, “ডিবির ওসি যা কিছু করে, সব এসপির নির্দেশে করে। গতকাল রাতেও তো ১০৭ কেজি গাঁজা আসামিসহ ধরা হয়েছে। এসপির নলেজে দিয়েই তা হাওয়া করা হয়েছে। উনি (এসপি) তিন বছর আগে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে এসপি হওয়ার জন্য মানুষের সঙ্গে ডাকাতি করেছেন এবং আমাদের দিয়ে ডাকাতি করিয়েছেন—এর প্রমাণ কে দেবে?”
তিনি আরও বলেন, “এডিশনাল লেফটেন্যান্ট জেনারেলের কাছে ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছি এবং এসপির বিরুদ্ধে মামলা করবো। এছাড়াও তিনি আমাদের খুদে ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন—’দুই লাখ টুমোরো’। আর যে মালের (মাদক) কথা বলা হচ্ছে, সেটা আমি চোখেও দেখিনি, এটা আদালতের বিষয়, এখানে আমার কিছু জানার নেই।”
রোববার (১৬ মার্চ) মুঠোফোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
এর আগে, শনিবার (১৫ মার্চ) ৯৬ কেজি গাঁজা প্রায় ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে নরসিংদী গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে তাকে এবং কোর্ট পুলিশের ওসি খন্দকার জাকির হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ঢাকার রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে নরসিংদীর দুই পুলিশ পরিদর্শককে ঢাকা রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি শিবপুর উপজেলার সৃষ্টিঘর আটাশিয়া এলাকায় মনির হোসেনের লটকন বাগান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেন তৎকালীন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল গাফফার। তিনি ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা মাদক ডিবি অফিসে নিয়ে আসেন এবং ওসি কামরুজ্জামানকে জানান।
জব্দ তালিকায় ৯৬ কেজি গাঁজার বাজার মূল্য ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা দেখানো হয়। আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী, জব্দকৃত মাদক আদালতে উপস্থাপন করা হলে, বিচারক তা ধ্বংসের নির্দেশ দেন। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, নরসিংদী ডিবি পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান এবং কোর্ট পুলিশের ওসি খন্দকার জাকির হোসেন মিলে এই ৯৬ কেজি গাঁজা মাধবদী আলগী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মায়া প্রধানের কাছে বিক্রি করেন।
প্রতি কেজি গাঁজার বাজার মূল্য ২৫ হাজার টাকা হলেও, চিহ্নিত মাদক কারবারির কাছে তা ১৫ হাজার টাকা কেজি দরে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সেই অর্থ ডিবির ওসি ও কোর্টের ওসি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা মৌখিক অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে আদালতের নথিপত্রে দেখা যায়, জব্দ ৯৬ কেজি মাদক ধ্বংস করা হয়েছে।
নরসিংদী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল হান্নান বলেন, “ওসি ডিবির বিরুদ্ধে উদ্ধার হওয়া মাদক ধ্বংস না করে বিক্রির একটি মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত চলছে। তাই এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।”