ঢাকা ০৮:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ধানমন্ডিতে প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা আদায়: অভিযুক্ত আশরাফুল তিন দিনের রিমান্ডে যুব মহিলালীগ নেত্রী লুনা হোসেন এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগে মানববন্ধন ট্রাম্পের ‘শুল্ক বোমা’র আগে চীনের রপ্তানি ১২.৪% বৃদ্ধি ভারত থেকে ইউনুসকে সতর্ক বার্তা শেখ হাসিনার বেকার সাংবাদিক রাশেদুলের নিগ্রহের শিকার গৌতম আবারও ৮ লক্ষ টাকার ভারতীয় শাড়ী ও থ্রিপিচ জব্দ করেছে বংশাল থানা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ১৮ রানে চেন্নাই কে হারালো পাঞ্জাব এসএ টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। মাগুরার আছিয়া ধর্ষণ: ডিএনএ রিপোর্টে হিটু শেখের জড়িত থাকার প্রমাণ
বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের নিষিদ্ধকরণ ও পুনরুত্থান

বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের পুনরুত্থান ও নিষিদ্ধকরণ

  • আবুল মনসুর
  • আপডেট সময় : ১২:১০:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
  • ১১৯ বার পড়া হয়েছে

২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করছে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঐতিহাসিক ৭ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে তারা আলোচনায় আসে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনেও তারা বিক্ষোভ করে। ঐদিনই সংগঠনটির উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম হতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিল। এরপর মিছিল বের করলেই পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সাথে সহিংস ঘটনায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হওয়ার পাশাপাশি কিছু সক্রিয় কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সাম্প্রতিক সময়ে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে সরকার পতনের পর সংগঠনটি নতুনভাবে তৎপরতা শুরু করে। ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে হিযবুত তাহরির রাজধানীসহ সারাদেশে বিশাল মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করার পাশাপাশি সারাদেশে হিযবুত তাহরির পোষ্টার ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে উক্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রচারনায় এগিয়ে রাখছে।

সম্প্রতি ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় কালো পতাকা মিছিল এবং ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার’ দাবিতে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় হিযবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব মিছিলের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আইসিসের (Islamic State) পতাকার সাদৃশ্য পাওয়া গেছে বলে ফ্যাক্ট চেকাররা নিশ্চিত করেছেন। এতে দেশজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আরও সতর্ক হয়েছে।

হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ তৎপরতা
হিযবুত তাহরীর সাধারণত সশস্ত্র জঙ্গি হামলায় সরাসরি জড়িত নয় বলে দাবি করলেও তাদের মতাদর্শ অনেক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে যায়। ফলে সংগঠনটির সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনটির প্রচারণা চালিয়ে সামরিক বাহিনী ও সাধারণ জনগণকে বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। ২০১০ সালে ঢাকায় গ্রেফতারকৃত কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে উগ্রপন্থী প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়, যেখানে তারা সরকার উৎখাতের আহ্বান  জানিয়েছিল। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপন প্রচারণা চালানোর সময় সংগঠনের কিছু সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২৪ সালে তারা প্রকাশ্যে পোস্টার, ব্যানার ও মিছিলের মাধ্যমে নতুনভাবে সংগঠনকে সক্রিয় করার চেষ্টা চালায়।

হিযবুত তাহরীর বিশ্বের কোন দেশে এবং কেন নিষিদ্ধ

উজবেকিস্তানে ১৯৯৯ সালে বোমা হামলার সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সেই দেশের সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৩ সালে হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ প্রচারের অভিযোগ উঠে এবং তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে জার্মানিতে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়। রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা হিযবুত তাহরীরকে চরমপন্থী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০৩ সালে নিষিদ্ধ করে। হিযবুত তাহরীর কর্মকাণ্ড উগ্রবাদী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল এবং তাদের ধর্মীয় বিদ্বেষী ও উস্কানীমূলক তৎপরতার জন্য সংগঠনটিকে ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়। যুক্তরাজ্য ২০২৪ সালে সংগঠনটির বিরুদ্ধে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংগঠনটি মূলত অনলাইনে সক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবারও প্রকাশ্যে মিছিল ও সভা-সমাবেশ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের পুনরুত্থান নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ প্রধানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও একই কথা উঠে এসেছে। তাদের ভাষ্য হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ছিল এবং তারা এখনও নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সতর্ক হয়েছে এবং তাদের মিডিয়া সমন্বয়কসহ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, যাতে তারা নতুন করে সংঘাত ও উগ্রবাদী তৎপরতা চালাতে না পারে। তবে সংগঠনটির আদর্শ ও ইসলামিক চিন্তা চেতনার সাথে অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোর ভাবধারার সাথে মত পার্থক্য কি কি হতে পারে সেটা নিয়ে নতুন করে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে অনেকেই দাবী করেন।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ধানমন্ডিতে প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা আদায়: অভিযুক্ত আশরাফুল তিন দিনের রিমান্ডে

বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের নিষিদ্ধকরণ ও পুনরুত্থান

বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের পুনরুত্থান ও নিষিদ্ধকরণ

আপডেট সময় : ১২:১০:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করছে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঐতিহাসিক ৭ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে তারা আলোচনায় আসে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনেও তারা বিক্ষোভ করে। ঐদিনই সংগঠনটির উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম হতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিল। এরপর মিছিল বের করলেই পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সাথে সহিংস ঘটনায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হওয়ার পাশাপাশি কিছু সক্রিয় কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সাম্প্রতিক সময়ে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে সরকার পতনের পর সংগঠনটি নতুনভাবে তৎপরতা শুরু করে। ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে হিযবুত তাহরির রাজধানীসহ সারাদেশে বিশাল মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করার পাশাপাশি সারাদেশে হিযবুত তাহরির পোষ্টার ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে উক্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রচারনায় এগিয়ে রাখছে।

সম্প্রতি ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় কালো পতাকা মিছিল এবং ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার’ দাবিতে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় হিযবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব মিছিলের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আইসিসের (Islamic State) পতাকার সাদৃশ্য পাওয়া গেছে বলে ফ্যাক্ট চেকাররা নিশ্চিত করেছেন। এতে দেশজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আরও সতর্ক হয়েছে।

হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ তৎপরতা
হিযবুত তাহরীর সাধারণত সশস্ত্র জঙ্গি হামলায় সরাসরি জড়িত নয় বলে দাবি করলেও তাদের মতাদর্শ অনেক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে যায়। ফলে সংগঠনটির সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনটির প্রচারণা চালিয়ে সামরিক বাহিনী ও সাধারণ জনগণকে বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। ২০১০ সালে ঢাকায় গ্রেফতারকৃত কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে উগ্রপন্থী প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়, যেখানে তারা সরকার উৎখাতের আহ্বান  জানিয়েছিল। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপন প্রচারণা চালানোর সময় সংগঠনের কিছু সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২৪ সালে তারা প্রকাশ্যে পোস্টার, ব্যানার ও মিছিলের মাধ্যমে নতুনভাবে সংগঠনকে সক্রিয় করার চেষ্টা চালায়।

হিযবুত তাহরীর বিশ্বের কোন দেশে এবং কেন নিষিদ্ধ

উজবেকিস্তানে ১৯৯৯ সালে বোমা হামলার সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সেই দেশের সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৩ সালে হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ প্রচারের অভিযোগ উঠে এবং তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে জার্মানিতে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়। রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা হিযবুত তাহরীরকে চরমপন্থী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০৩ সালে নিষিদ্ধ করে। হিযবুত তাহরীর কর্মকাণ্ড উগ্রবাদী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল এবং তাদের ধর্মীয় বিদ্বেষী ও উস্কানীমূলক তৎপরতার জন্য সংগঠনটিকে ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়। যুক্তরাজ্য ২০২৪ সালে সংগঠনটির বিরুদ্ধে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংগঠনটি মূলত অনলাইনে সক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবারও প্রকাশ্যে মিছিল ও সভা-সমাবেশ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের পুনরুত্থান নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ প্রধানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও একই কথা উঠে এসেছে। তাদের ভাষ্য হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ছিল এবং তারা এখনও নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সতর্ক হয়েছে এবং তাদের মিডিয়া সমন্বয়কসহ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, যাতে তারা নতুন করে সংঘাত ও উগ্রবাদী তৎপরতা চালাতে না পারে। তবে সংগঠনটির আদর্শ ও ইসলামিক চিন্তা চেতনার সাথে অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোর ভাবধারার সাথে মত পার্থক্য কি কি হতে পারে সেটা নিয়ে নতুন করে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে অনেকেই দাবী করেন।