ঢাকার আশুলিয়ায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ককটেল বিস্ফোরণের পর দোকানের মালিক দিলীপ দাশকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
৯ মার্চ রবিবার রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাত দল স্বর্ণালংকার ভর্তি একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, রাতে তারাবির নামাজের সময় বাজার অনেকটাই ফাঁকা ছিল। দিলীপ দাশ দোকান বন্ধ করছিলেন, পাশে ছিলেন তার স্ত্রী সরস্বতী দাশ। ঠিক তখনই ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত হঠাৎ এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর তারা দিলীপ দাশের হাতে থাকা স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
বাধা দেওয়ায় ডাকাতরা দিলীপ দাশকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। স্ত্রী সরস্বতী দাশের কাছ থেকেও ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর আরেকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা দিলীপ দাশকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেরাজুর রেহান পাভেল বলেন, “চাপাতির আঘাতে দিলীপ দাশের ফুসফুস ও হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার গালে, বুকে ও পিঠে গভীর জখম ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি মারা যান।”
নয়ারহাট বাজারের ঝাড়ুদার স্বপ্না বেগম বলেন, “আমি তখন বাজার ঝাড়ু দিচ্ছিলাম। দেখি দিলীপ দাশ দোকান বন্ধ করছিলেন, আর তার স্ত্রী পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ ৪ জন যুবক এসে ককটেল ফুটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। তারা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে দিলীপ দাশ বাধা দেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে এবং ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়।”
নিহতের স্ত্রী সরস্বতী দাশ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ওরা! আমরা বাধা দিতে পারিনি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।”
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ৪ জন ডাকাত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিলীপ দাশকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং স্বর্ণালংকার ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। আশপাশের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ওই এলাকায় ৭-৮ জন সন্দেহজনক ব্যক্তি ঘোরাফেরা করছিল। আমরা দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।”
ডাকাত দলের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।