ঢাকা ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ধানমন্ডিতে প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা আদায়: অভিযুক্ত আশরাফুল তিন দিনের রিমান্ডে যুব মহিলালীগ নেত্রী লুনা হোসেন এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগে মানববন্ধন ট্রাম্পের ‘শুল্ক বোমা’র আগে চীনের রপ্তানি ১২.৪% বৃদ্ধি ভারত থেকে ইউনুসকে সতর্ক বার্তা শেখ হাসিনার বেকার সাংবাদিক রাশেদুলের নিগ্রহের শিকার গৌতম আবারও ৮ লক্ষ টাকার ভারতীয় শাড়ী ও থ্রিপিচ জব্দ করেছে বংশাল থানা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ১৮ রানে চেন্নাই কে হারালো পাঞ্জাব এসএ টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। মাগুরার আছিয়া ধর্ষণ: ডিএনএ রিপোর্টে হিটু শেখের জড়িত থাকার প্রমাণ
জেলার স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা !

কমিউনিটি ক্লিনিকের সংকট; বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবা

  • হাসান মামুন
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

দেশের গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। রোগী ও তাদের স্বজনরা সেবা পেতে ছুটে এলেও, কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে।

সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ও ক্লিনিকের বেহাল দশা

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত জমিতে স্থাপিত হয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছিল। তবে, দীর্ঘদিন ধরে তদারকির অভাবে ক্লিনিকগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ৯ মাস ধরে কোনো বেতনভাতা না পাওয়ায় সিএইচসিপিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার চাকরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি পেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সরেজমিনে পিরোজপুর সদর উপজেলার উত্তর কদমতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। দায়িত্বরত সিএইচসিপি মোঃ মুঈদুল্লাহ মোল্লা জানান, ১৪ বছর চাকরিতে থাকার পরও বেতন বাড়েনি, বরং ১৬তম গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি ২০১১ সালে যোগদান করি, তবে এখন পর্যন্ত চাকরি স্থায়ীকরণের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। বেতন না পেয়ে লোন নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে, যা পরিশোধের কোনো উপায় দেখছি না।”

দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় নষ্ট স্বাস্থ্যসেবা

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়নি। ফলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়া, দেয়ালের আস্তর খসে যাওয়া, বাথরুম ও টিউবওয়েল অকেজো থাকার কারণে রোগী ও সিএইচসিপিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় গ্রীষ্মকালে আরও দুর্ভোগ বাড়ে। এছাড়া, চিকিৎসক সংকট ও দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি

সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন পিরোজপুরের সভাপতি মোস্তফা তালুকদার জানান, জেলার ৭ উপজেলায় ১৬৭ জন সিএইচসিপি কর্মরত আছেন, যাদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। জুন ২০২৪ থেকে বেতন বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মতিউর রহমান জানান, “কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একাধিকবার প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সিএইচসিপিদের বেতন সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”

গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করা জরুরি। দ্রুত বেতনভাতা পরিশোধ, অবকাঠামো সংস্কার ও তদারকি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।

 

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ধানমন্ডিতে প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা আদায়: অভিযুক্ত আশরাফুল তিন দিনের রিমান্ডে

জেলার স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা !

কমিউনিটি ক্লিনিকের সংকট; বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবা

আপডেট সময় : ০৮:৩৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

দেশের গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। রোগী ও তাদের স্বজনরা সেবা পেতে ছুটে এলেও, কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে।

সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ও ক্লিনিকের বেহাল দশা

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত জমিতে স্থাপিত হয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছিল। তবে, দীর্ঘদিন ধরে তদারকির অভাবে ক্লিনিকগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ৯ মাস ধরে কোনো বেতনভাতা না পাওয়ায় সিএইচসিপিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার চাকরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি পেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সরেজমিনে পিরোজপুর সদর উপজেলার উত্তর কদমতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। দায়িত্বরত সিএইচসিপি মোঃ মুঈদুল্লাহ মোল্লা জানান, ১৪ বছর চাকরিতে থাকার পরও বেতন বাড়েনি, বরং ১৬তম গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি ২০১১ সালে যোগদান করি, তবে এখন পর্যন্ত চাকরি স্থায়ীকরণের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। বেতন না পেয়ে লোন নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে, যা পরিশোধের কোনো উপায় দেখছি না।”

দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় নষ্ট স্বাস্থ্যসেবা

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়নি। ফলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়া, দেয়ালের আস্তর খসে যাওয়া, বাথরুম ও টিউবওয়েল অকেজো থাকার কারণে রোগী ও সিএইচসিপিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় গ্রীষ্মকালে আরও দুর্ভোগ বাড়ে। এছাড়া, চিকিৎসক সংকট ও দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি

সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন পিরোজপুরের সভাপতি মোস্তফা তালুকদার জানান, জেলার ৭ উপজেলায় ১৬৭ জন সিএইচসিপি কর্মরত আছেন, যাদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। জুন ২০২৪ থেকে বেতন বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মতিউর রহমান জানান, “কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একাধিকবার প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সিএইচসিপিদের বেতন সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”

গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করা জরুরি। দ্রুত বেতনভাতা পরিশোধ, অবকাঠামো সংস্কার ও তদারকি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।