চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থেকে এক বছর বয়সী শিশু রাব্বীকে অপহরণ করে বিক্রি করে দেয়ার ৭ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে এবং অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১ বছর ৩ মাস বয়সী একটি শিশুকে জনৈক দুলাল নামের এক ব্যক্তি কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে শিশুটির পরিবার অভিযোগ করে। এরপর থেকেই সেই শিশু উদ্ধার এবং অপহরণকারীকে গ্রেফতারের জন্য র্যাব-৭ তৎপর হয়।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং তারিখে ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার তার ৫ বছর বয়সী কণ্যা ও ১ বছর ৩ মাস বয়সী শিশু পুত্র রাব্বীকে নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আসলে জনৈক দুলাল নামে একজন ব্যক্তি সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে ফাতেমা আক্তার দুলাল মিয়াকে নেত্রকোনা ট্রেনের সময় সংক্রান্তে জিজ্ঞাসা করলে দুলাল মিয়া জানায় আজকে নেত্রকোণাগামী কোন ট্রেন নাই। ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার দুলাল মিয়াকে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী এলাকায় তাদের বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে দুলাল মিয়া ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার এবং তার সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে দুলাল মিয়া ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার’কে বিভিন্ন কৌশলে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানাধীন বাসুর কলোনীতে নিয়ে যায় এবং সেখানে একটি রুম ভাড়া করে অবস্থান করে। পরর্বতীতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার সকালের নাস্তা খেয়ে বাথরুমে গেলে এই সুযোগে দুলাল মিয়া ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার এর ১ বছর ৩ মাসের শিশু বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রেস ব্রিফিং আরও জানানো হয়, পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার এর স্বামী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানায় মোঃ দুলাল মিয়া’কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-২৪, তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সং/২০২০) এর ৭।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম সূত্রে বর্ণিত মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় আসামী মোঃ দুলাল মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং তারিখ আনুমানিক বিকাল 1
১৬৩০ ঘটিকায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম, র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ এবং র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা এর যৌথ আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ দুলাল মিয়া (৪৮), পিতা-দুধ মিয়া, সাং- শোলাবাড়ী থানা-সরাইল, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া’কে গ্রেফতার করে। আসামী দুলাল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে ব্রাহ্মবাড়ীয়া জেলায় তাদের পরিচিত এক প্রবাসী দম্পতির কাছে ১ লাখ টাকার বিনিমিয়ে অপহৃত শিশুটিকে বিক্রয় করে। পরবর্তীতে তার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অদ্য ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং তারিখ আনুমানিক রাত ০৩৩০ ঘটিকায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সরাইল থানাধীন এলাকা হতে শিশুটিকে উদ্ধারপূর্বক অপর আসামী মোরশেদ মিয়া, পিতা-ইজ্জত আলী, সাং-শাখাইতি, উভয় থানা-সরাইল, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ দুলাল এর বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানায় চুরি সংক্রান্তে ০১টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও, মোঃ দুলাল মিয়া আড়াই বছর বয়সী শিশু সারা মনি কে অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত এক নম্বর আসামি। উক্ত মামলায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মোঃ দুলাল মিয়ার স্ত্রী রুনা বেগম বর্তমানে কিশোরগঞ্জ ভৈরব থানা কারাগারে রয়েছে। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত আসামি মোঃ দুলাল মিয়ার মোবাইলে বাচ্চা বিক্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কথোপকথনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। আপাতদৃষ্টিতে, আসামী এবং তার পরিবার এক ভয়ংকর সক্রিয় অপহরণ চক্রের বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের দ্রুত ধরার বিষয়ে র্যাব সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অপর আসামী মোরশেদ মিয়া’কে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সে প্রবাসে ১৭ বছর ছিল। সে ০৫টি কন্য সন্তানের জনক। মূলত, পুত্র সন্তানের আকাঙ্খায় সে এই অপহরণ চক্রের সাথে যোগাসাজশে প্ররোচনা দিয়ে শিশু বাচ্চাটিকে তার কাছে নিয়ে যায়।গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।