ঢাকা ১১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ধানমন্ডিতে প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা আদায়: অভিযুক্ত আশরাফুল তিন দিনের রিমান্ডে যুব মহিলালীগ নেত্রী লুনা হোসেন এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগে মানববন্ধন ট্রাম্পের ‘শুল্ক বোমা’র আগে চীনের রপ্তানি ১২.৪% বৃদ্ধি ভারত থেকে ইউনুসকে সতর্ক বার্তা শেখ হাসিনার বেকার সাংবাদিক রাশেদুলের নিগ্রহের শিকার গৌতম আবারও ৮ লক্ষ টাকার ভারতীয় শাড়ী ও থ্রিপিচ জব্দ করেছে বংশাল থানা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ১৮ রানে চেন্নাই কে হারালো পাঞ্জাব এসএ টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। মাগুরার আছিয়া ধর্ষণ: ডিএনএ রিপোর্টে হিটু শেখের জড়িত থাকার প্রমাণ

অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গিরচরে স্থানীয় জনতার মিছিল; সব কারখানায় মিলল গ্যাস টানার পাম্প

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

কামরাঙ্গিরচর, লালবাগ ও হাজারীবাগের তিতাসের গ্যাস খানার ডুলির কারখানার পেটে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় চলছে গ্যাস সিন্ডিকেট। আইনের ফাঁকফোঁকরে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে আসামীরা।

২৪ বার্তা কক্ষঃ দীর্ঘদিন ধরে কামরাঙ্গিরচরের সব জায়গায় গ্যাস পাচ্ছিলনা সাধারন ভোক্তারা। লালবাগ, হাজারিবাগ ও কামরাঙ্গিরচরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা খানার ডুলি, বাট্টি, মুড়ির কারখানা, ঢালাই কারখানা ও শীষার কারখানা, প্লাস্টিকের জুতা তৈরির কারখানাগুলোতে মেইন লাইন থেকে একটি বিশেষায়িত পাম্পের দ্বারা দ্রুত লাইনের গ্যাস টেনে নেয়ার ফলে স্থানীয়রা রান্নার জন্য গ্যাস পায়না। এই অভিযোগে অসংখ্যবার স্থানীয় থানাপুলিশ, কাউন্সিলর থেকে নেতা এবং ব্যবসায়ীদেরকে সাথে নিয়েই আলোচনা সভা বৈঠক করা হলেও তেমন আশানুরূপ সুফল স্থানীয়রা পায়না। দেশের প্রথমসারীর ইলেট্রনিক মিডিয়া থেকে প্রিন্ট মিডিয়ায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়ে নিউজ হয়েছে অসংখ্যবার। তিতাস কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অব্যাহত রেখেছিল তবে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধে তিতাসের সকল প্রচেষ্টা বারেবারেই হচ্ছে, এলাকার কিছু দুষ্টুচক্রের কারনে। তিতাস একদিকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে অন্যদিকে সেই সংযোগগুলো গ্যাস মিস্ত্রি বা গ্যাস সংযোগ দেয়ার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনরায় সংযোগগুলো দিয়ে দেয়া হয়। এই সুযোগে এই চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। রাজধানীর কামরাঙ্গিরচর, লালবাগ ও হাজারিবাগসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলেই দেখা যায়, তিতাসের স্থানীয় কার্যালয়ের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে প্রতিবারই ৬-৮টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে সেই সংযোগ রাতের আঁধারে কিছু গ্যাস সিন্ডিকেটের সাথে চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় সংযোগ দেয়া হয়। আইনের ফাঁকফোঁকরে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

দীর্ঘদিন এলাকায় গ্যাস না পাওয়া নিয়ে এলাকার জনগনের পক্ষে ভোরের পাতার সাথে যোগাযোগ করা হলে, আমরা  প্রশাসনিকভাবে যোগাযোগ করে, হলেও তিতাস ব্যবস্থা নেন কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। পরে বাধ্য হয়ে আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে স্থানীয় নারী পুরুষ মহিলা সবাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। একসময় স্থানীয়রা এলাকার বিভিন্ন ডুলির রঙ কারখানাগুলোতে অভিযান শুরু করে পাম্পগুলো আবিস্কার করে। প্রশ্ন হলো, যেসব কারখানায় বৈধ কোন লাইনই নাই, সেইসব কারখানায় পাম্প দিয়েই সব গ্যাস ব্যবহার করছে। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশার ব্যাপার হলো, এলাকার গ্যাস সিন্ডিকেট গংদের উৎপাতে এলাকাবাসীই এখন বিপাকে পড়েছে। যারা অবৈধ কারখানায় ঢুকে অভিযান চালিয়েছে, তাদেরকেই হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে ঢালাই কারখানার মালিক আফজালসহ গ্যাস সিন্ডিকেটে গ্রুপের সদস্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূক্তভোগী কামরাঙ্গিরচর এলাকার প্রায় ৩৫০ খানার ডোলার কারখানা ছিল বিগত দুই বছরে তিতাসের একের পর এক অভিযান পরিচালিত হয়ে বিপুল অংকের টাকা জরিমানা করায় কমতে কমতে কামরাঙ্গিরচরের প্রভাবশালী ও অর্থসম্পত্তির মালিক হওয়ায়  ৩৫টির মত কারখানাকে সরাতে সক্ষম হয়নি কেউ। ডোলা কারখানা মালিকদের একটি সংগঠন আছে। যার সভাপতি আমিনুল ইসলাম সরদার, তার দুইটি খানার ডোলা কারখানা সহ ২টি পিতল ও ঢালাই কারখানা চালায়। সাধারন সম্পাদক হিসেবে আছে রফিকুল ইসলাম ওরফে ডোলা রফিক মূলত ডোলা সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত তারাই নিয়ে থাকে। এছাড়াও কামরাঙ্গিরচরে প্রভাবশালী ও সম্পদশালী ডোলার ব্যবসায়ী হলেন ডোলা পলাশ, ডোলা রাসেল, ডোলা রফিক (২), ডোলা আলী, ডোলা আলমগীর, ডোলা শামীম, ডোলা আনোয়ার, ডোলা আরিফ, ডোলা আরিফ (২), ডোলা আশরাফ, ডোলা বেলায়েত, ডোলা বিপ্লব, ডোলা দেলোয়ার, ডোলা ইকবাল, ডোলা ইসমাইল, ডোলা জাহিদ, ডোলা জহির, ডোলা জমির, ডোলা কালাম, ডোলা মনির, ডোলা আলমাস, ডোলা নাসির, ডোলা খোকন, ডোলা খোকন (২), ডোলা লালমিয়া, ডোলা মফিজ, ডোলা মানিক, ডোলা রাকিব, ডোলা ডোলা সাহাবউদ্দিন, ডোলা সজিব, ডোলা সালাম, ডোলাম সেলিম, ডোলা শাকিল, ডোলা শহিদুল, ডোলা সোহেল, ডোলা স্বপন, ডোলা টুকু, ডোলা ইয়াছিন, ডোলা বারেক, ডোলা মিলন ও মিলনের ভাই, ডোলা খালেক, ডোলা হাকিম, ডোলা ইমরান, ডোলা দীন ইসলাম, ডোলা বাবু, ডোলা আজিম (হাজারীবাগ) ছিল দীর্ঘদিন ধরে ডোলা কারখানা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে চালিয়ে আসছে। এদের কয়েকজন ভিন্ন কারনে ডোলার কারখানা স্থান পরিবর্তন  করেছে আবার কয়েকজন কারখানা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা যায়। তবে আওয়ামীলীগের আমলে ডোলা মিলন ও ডোলা হাকিম টাকা উঠানোর দায়িত্বে ছিল।

ডোলার কারখানাগুলোতে রঙ পোড়ানোর চেম্বার ও চেম্বারের সাইজ অনুযায়ী কারখানা প্রতি ভাড়া নির্ধারন করা হতো। প্রতিটি ডোলার কারখানা থেকে ১০হাজার ও ৮ হাজার করে তোলা হতো। মিলন এই টাকা তুলে সভাপতি আমিনুল সরদার ও সাধারন সম্পাদক ডোলা রফিক (মাগুর মাছের গাড়া, ঝাউলাহাটি) এর দেয়া হিসেব মতে তৎকালীন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলরসহ নেতা এবং তিতাসের কিছু অসৎ কর্মচারীদের মাঝে বন্টন করে দিত। আওয়ামীলীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর কয়েকজন ছাড়া সেই ব্যবসা আগের মতই চলছে বর্তমানে বিএনপির বেশ কিছু পাতিনেতা এই ডোলার কারখানা থেকে টাকা উঠায় যা পুলিশ, এলাকার রাজনৈতিক দলের নেতা ও পাতি নেতা সবার মধ্যেই বন্টন করে দেয়। তবে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় কেউ তাদের নাম সরাসরি বলতে সাহস করছেননা। তিতাসের স্থানীয় বৈধ  গ্রাহকদের দাবী, পুলিশ ও তিতাস চাইলে এক সপ্তাহে সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারে কিন্তু কেন আনেনা তা তিতাস ও পুলিশ জানে।

কামরাঙ্গিরচরে জৈনেক অবৈধ সংযোগকারী জানান, শুধু আফজাল নয় এই রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে তার মত আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপ পুরো কামরাঙ্গিরচর এলাকায় আড়াই লক্ষ থেকে সাড়ে চারলক্ষ টাকা চুক্তিতে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। আর গ্যাস সংযোগের জন্য তিতাসের এক ঠিকাদারকে বিপুল অংকের টাকা দিয়ে আগেই কনটাক্ট করতে হয়। আর যে বা যারা এই তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগে জড়িত তারা প্রায় সবাই মাসিক চাঁদা পায়। উল্লেখ্য, কামরাঙ্গিরচরে ৭৫ শতাংশ গ্যাস সংযোগ অবৈধ বলে অনেক আগে থেকেই স্বীকৃত। কেউ ১/২ চুলার অনুমতি নিয়ে চালাচ্ছে ৫ থেকে ১২টি চুলা আবার ৮ থেকে ১০টি চুলার অনুমতি নিয়ে চালাচ্ছে ১৫ থেকে ২২টি চুলা।

এই গ্যাস নিয়ে যেন অরাজকতার শেষ নেই। সরকারের বা তিতাসের গ্যাস কিন্তু ভাড়া পায় কিছু অসাধু ও রাজনৈতিক দুষ্টচক্র এবং সরকারী কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী। আর গ্যাসের বৈধ গ্রাহকরা পাচ্ছেনা তাদের ন্যায্য গ্যাস। বছরের পর বছর যুগের পর যুগ বিল পরিশোধ করেও গ্যাস মিলছে না বৈধ গ্রাহকদের ঘরে কিন্তু অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগকারীদের কাছে পর্যাপ্ত গ্যাস থাকে।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরপর অনেকবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও জরিমানা করা হলেও বাস্তবপক্ষে তা কোনপ্রকার কাজে আসছেনা। কারণ এলাকাবাসী জানান, বিএনপি জামায়াত সরকারের সময়ে যারাই অবৈধ সংযোগ দিয়েছিল তারাই আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে সক্রিয় ছিল এখন ক্ষমতার পালাবদলে ঐচক্রটি ফুলেফেপে আরও শক্তিশালী হয়ে গেছে। এখন তাদের দাপটে স্থানীয় পুলিশ থেকে সাধারন মানুষ সবাই ভয়ে চুপ থাকে।

তিতাস কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে  তিতাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনাতো দূরের কথা, অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হলে প্রয়োজন স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদন ও গ্যাস সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের সংকট থাকায় তিতাস কর্তৃপক্ষকে সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হয়। এবং ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া স্বাভাবিকভাবে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মত কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনা তিতাস কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উপরিউক্ত আইনটি সকল ধরনের চাহিদার যোগান দিতে পারেনা বলেও অভিমত দেন তিতাসের অভিজ্ঞকর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৪০ নং আইন বাংলাদেশ গ্যাস আইন ১০ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই আইনের ১০নং ধারার ২ উপ-ধারার ১ এ বলা হয়েছে, কোন গৃহস্থালী গ্রাহক অথবা বাণিজ্যিক গ্রাহক অথবা শিল্প, মৌসুমী বা ক্যাপটিভ পাওয়ার বা সিএনজি স্টেশন বা চা বাগান শ্রেণীভুক্ত গ্রাহক অথবা বিদ্যুৎ ও সার শ্রেণীভুক্ত গ্রাহকের নিম্নবর্ণিত যে কোন কাজ হইবে একটি অপরাধে বা এই ধরনের যেকোন কোন অপরাধের দায়ে-

(ক) কোন গৃহস্থালী গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ৩ (তিন) মাস কারাদন্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে উক্ত ব্যক্তি অন্যূন ৩ (তিন) মাস এবং অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ডে এবং অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডনীয় হইবে।

(খ) কোন বাণিজ্যিক গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ডে বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে তিনি অন্যুন ৬ (ছয়) মাস এবং অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক ৪০ (চল্লিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে।

(গ) কোন শিল্প, মৌসুমী বা ক্যাপটিভ পাওয়ার বা সিএনজি স্টেশন বা চা বাগান শ্রেণীভুক্ত গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদন্ডে বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে তিনি অন্যূন ১ (এক) বৎসর এবং অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক ২ (দুই) লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে। এবং

(ঘ) কোন বিদ্যুৎ ও সার শ্রেণীভুক্ত গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক ২ (দুই) লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে তিনি অন্যুন ২ (দুই) বৎসর এবং অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে।

উক্ত আইনে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা আদৌ কি সম্ভব? একদিকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় বিড়ম্বনা অন্যদিকে ক্ষতির তুলনায় অপ্রতুল শাস্তির কারণে পুরো এলাকার বাসিন্দারাই এখন অবৈধ গ্যাস সংযোগে ব্যস্ত। এর অন্যকারণ হলো, যারা আগে বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়েছিল তাদের গ্যাস লাইনে গ্যাস থাকেনা কিন্তু অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিলে নিজেদের ইচ্ছেমত বড় সাইজের পাইপ সংযোগ দিয়ে বেশিবেশি গ্যাস পাওয়া যায়। তাই সবাই অবৈধ গ্যাসের দিকেই ঝুঁকছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।

এলাকায় অভিযুক্ত আসামীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার নতুন গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেনা তাই আমরা অবৈধ সংযোগ নিতে বাধ্য হই। ঢাকা শহরে বাঁচতে গ্যাসের বিকল্প নাই, তাই নিজের ব্যবসা কিংবা পরিবারকে বাঁচাতে হলে যেকোন উপায়েই হউক গ্যাস নিয়ে থাকি। টাকা ছাড়াতো নিচ্ছিনা, গ্যাস মিস্ত্রি, স্থানীয় নেতা, পুলিশ সবাইকে দিয়েই গ্যাস সংযোগ নেয়া হয়। প্রতিমাসে ভাড়াও দিয়ে থাকি কারা কারা জড়িত আপনারা সবই জানেন। কিন্তু তাদের প্রভাবে আমরা তাদের নাম মুখে আনতে পারব না। ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করে, জরিমানা দেই, প্রয়োজনে জেল খাটব, একদিকে জেলে ঢুকব আরেক দিকে জামিন নিয়ে চলে আসব, এতে কোন সমস্যা নাই। তারপরও আমাদের লাভ। এসব কথা বলছিলেন, অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে দন্ডিত হওয়া এক আসামী।

উল্লেখ্য, রাঙ্গিরচরবাসী গ্যাস সঙ্কটে রয়েছে দীর্ঘদিন। গ্যাসের লাইন আছে কিন্তু চুলো জ্বলেনা গ্যাস স্বল্পতায়। বছর পেরিয়ে যুগ পার হয়ে যাচ্ছে পর্যাপ্ত গ্যাস কামরাঙ্গিরচর, হাজারীবাগ ও লালবাগবাসী নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস পায়নি। সেই বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমল থেকেই কামরাঙ্গিরচরে বিভিন্ন কারখানা তৈরি করতে শুরু করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সময়েও এই সিন্ডিকেট সাথে জড়িত ছিল। এই গ্যাসের ব্যবসা করে স্থানীয় অনেক নেতাই বিপুল অর্থ সম্পদ করেছেন এবং তাদের অনেকের নামের সাথেও গ্যাস যুক্ত হয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অনেকে পালিয়ে গেলেও বর্তমানে এখন নতুন দলের গ্যাস সিন্ডিকেট দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গিরচরে। রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয়ে পুরো এলাকাটাকে নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। আওয়ামীলীগের সময়ে অনেকে থানা পুলিশ কিংবা তিতাসে অভিযোগ দিতে পারলেও তবে বর্তমানে বিবদমান পরিস্থিতিতে কেউ অভিযোগ দেয়ার সাহস পাচ্ছিলনা।

আজ স্থানীয়দের সাথে এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একতায় রাস্তায় প্রতিবাদ জানায় এবং বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে স্থানীয়রাই গ্যাস টানার পাম্প উদ্ধার করে কিন্তু তিতাসের লোক না থাকায় তাদের পাম্পগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। এরপর থেকেই কারখানায় গিয়ে অভিযান চালানো মানুষকে গ্যাস সিন্ডিকেটের সদস্যরা গিয়ে হুমকি ধামকি ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এই ব্যাপারে স্থানীয় সেনাবাহিনীর সহযোগীতা নিলে, তারা তিতাসের সহযোগীতা নিতে পরামর্শ দেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ধানমন্ডিতে প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা আদায়: অভিযুক্ত আশরাফুল তিন দিনের রিমান্ডে

অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গিরচরে স্থানীয় জনতার মিছিল; সব কারখানায় মিলল গ্যাস টানার পাম্প

আপডেট সময় : ১২:২৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কামরাঙ্গিরচর, লালবাগ ও হাজারীবাগের তিতাসের গ্যাস খানার ডুলির কারখানার পেটে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় চলছে গ্যাস সিন্ডিকেট। আইনের ফাঁকফোঁকরে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে আসামীরা।

২৪ বার্তা কক্ষঃ দীর্ঘদিন ধরে কামরাঙ্গিরচরের সব জায়গায় গ্যাস পাচ্ছিলনা সাধারন ভোক্তারা। লালবাগ, হাজারিবাগ ও কামরাঙ্গিরচরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা খানার ডুলি, বাট্টি, মুড়ির কারখানা, ঢালাই কারখানা ও শীষার কারখানা, প্লাস্টিকের জুতা তৈরির কারখানাগুলোতে মেইন লাইন থেকে একটি বিশেষায়িত পাম্পের দ্বারা দ্রুত লাইনের গ্যাস টেনে নেয়ার ফলে স্থানীয়রা রান্নার জন্য গ্যাস পায়না। এই অভিযোগে অসংখ্যবার স্থানীয় থানাপুলিশ, কাউন্সিলর থেকে নেতা এবং ব্যবসায়ীদেরকে সাথে নিয়েই আলোচনা সভা বৈঠক করা হলেও তেমন আশানুরূপ সুফল স্থানীয়রা পায়না। দেশের প্রথমসারীর ইলেট্রনিক মিডিয়া থেকে প্রিন্ট মিডিয়ায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়ে নিউজ হয়েছে অসংখ্যবার। তিতাস কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অব্যাহত রেখেছিল তবে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধে তিতাসের সকল প্রচেষ্টা বারেবারেই হচ্ছে, এলাকার কিছু দুষ্টুচক্রের কারনে। তিতাস একদিকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে অন্যদিকে সেই সংযোগগুলো গ্যাস মিস্ত্রি বা গ্যাস সংযোগ দেয়ার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনরায় সংযোগগুলো দিয়ে দেয়া হয়। এই সুযোগে এই চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। রাজধানীর কামরাঙ্গিরচর, লালবাগ ও হাজারিবাগসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলেই দেখা যায়, তিতাসের স্থানীয় কার্যালয়ের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে প্রতিবারই ৬-৮টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে সেই সংযোগ রাতের আঁধারে কিছু গ্যাস সিন্ডিকেটের সাথে চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় সংযোগ দেয়া হয়। আইনের ফাঁকফোঁকরে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

দীর্ঘদিন এলাকায় গ্যাস না পাওয়া নিয়ে এলাকার জনগনের পক্ষে ভোরের পাতার সাথে যোগাযোগ করা হলে, আমরা  প্রশাসনিকভাবে যোগাযোগ করে, হলেও তিতাস ব্যবস্থা নেন কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। পরে বাধ্য হয়ে আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে স্থানীয় নারী পুরুষ মহিলা সবাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। একসময় স্থানীয়রা এলাকার বিভিন্ন ডুলির রঙ কারখানাগুলোতে অভিযান শুরু করে পাম্পগুলো আবিস্কার করে। প্রশ্ন হলো, যেসব কারখানায় বৈধ কোন লাইনই নাই, সেইসব কারখানায় পাম্প দিয়েই সব গ্যাস ব্যবহার করছে। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশার ব্যাপার হলো, এলাকার গ্যাস সিন্ডিকেট গংদের উৎপাতে এলাকাবাসীই এখন বিপাকে পড়েছে। যারা অবৈধ কারখানায় ঢুকে অভিযান চালিয়েছে, তাদেরকেই হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে ঢালাই কারখানার মালিক আফজালসহ গ্যাস সিন্ডিকেটে গ্রুপের সদস্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূক্তভোগী কামরাঙ্গিরচর এলাকার প্রায় ৩৫০ খানার ডোলার কারখানা ছিল বিগত দুই বছরে তিতাসের একের পর এক অভিযান পরিচালিত হয়ে বিপুল অংকের টাকা জরিমানা করায় কমতে কমতে কামরাঙ্গিরচরের প্রভাবশালী ও অর্থসম্পত্তির মালিক হওয়ায়  ৩৫টির মত কারখানাকে সরাতে সক্ষম হয়নি কেউ। ডোলা কারখানা মালিকদের একটি সংগঠন আছে। যার সভাপতি আমিনুল ইসলাম সরদার, তার দুইটি খানার ডোলা কারখানা সহ ২টি পিতল ও ঢালাই কারখানা চালায়। সাধারন সম্পাদক হিসেবে আছে রফিকুল ইসলাম ওরফে ডোলা রফিক মূলত ডোলা সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত তারাই নিয়ে থাকে। এছাড়াও কামরাঙ্গিরচরে প্রভাবশালী ও সম্পদশালী ডোলার ব্যবসায়ী হলেন ডোলা পলাশ, ডোলা রাসেল, ডোলা রফিক (২), ডোলা আলী, ডোলা আলমগীর, ডোলা শামীম, ডোলা আনোয়ার, ডোলা আরিফ, ডোলা আরিফ (২), ডোলা আশরাফ, ডোলা বেলায়েত, ডোলা বিপ্লব, ডোলা দেলোয়ার, ডোলা ইকবাল, ডোলা ইসমাইল, ডোলা জাহিদ, ডোলা জহির, ডোলা জমির, ডোলা কালাম, ডোলা মনির, ডোলা আলমাস, ডোলা নাসির, ডোলা খোকন, ডোলা খোকন (২), ডোলা লালমিয়া, ডোলা মফিজ, ডোলা মানিক, ডোলা রাকিব, ডোলা ডোলা সাহাবউদ্দিন, ডোলা সজিব, ডোলা সালাম, ডোলাম সেলিম, ডোলা শাকিল, ডোলা শহিদুল, ডোলা সোহেল, ডোলা স্বপন, ডোলা টুকু, ডোলা ইয়াছিন, ডোলা বারেক, ডোলা মিলন ও মিলনের ভাই, ডোলা খালেক, ডোলা হাকিম, ডোলা ইমরান, ডোলা দীন ইসলাম, ডোলা বাবু, ডোলা আজিম (হাজারীবাগ) ছিল দীর্ঘদিন ধরে ডোলা কারখানা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে চালিয়ে আসছে। এদের কয়েকজন ভিন্ন কারনে ডোলার কারখানা স্থান পরিবর্তন  করেছে আবার কয়েকজন কারখানা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা যায়। তবে আওয়ামীলীগের আমলে ডোলা মিলন ও ডোলা হাকিম টাকা উঠানোর দায়িত্বে ছিল।

ডোলার কারখানাগুলোতে রঙ পোড়ানোর চেম্বার ও চেম্বারের সাইজ অনুযায়ী কারখানা প্রতি ভাড়া নির্ধারন করা হতো। প্রতিটি ডোলার কারখানা থেকে ১০হাজার ও ৮ হাজার করে তোলা হতো। মিলন এই টাকা তুলে সভাপতি আমিনুল সরদার ও সাধারন সম্পাদক ডোলা রফিক (মাগুর মাছের গাড়া, ঝাউলাহাটি) এর দেয়া হিসেব মতে তৎকালীন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলরসহ নেতা এবং তিতাসের কিছু অসৎ কর্মচারীদের মাঝে বন্টন করে দিত। আওয়ামীলীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর কয়েকজন ছাড়া সেই ব্যবসা আগের মতই চলছে বর্তমানে বিএনপির বেশ কিছু পাতিনেতা এই ডোলার কারখানা থেকে টাকা উঠায় যা পুলিশ, এলাকার রাজনৈতিক দলের নেতা ও পাতি নেতা সবার মধ্যেই বন্টন করে দেয়। তবে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় কেউ তাদের নাম সরাসরি বলতে সাহস করছেননা। তিতাসের স্থানীয় বৈধ  গ্রাহকদের দাবী, পুলিশ ও তিতাস চাইলে এক সপ্তাহে সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারে কিন্তু কেন আনেনা তা তিতাস ও পুলিশ জানে।

কামরাঙ্গিরচরে জৈনেক অবৈধ সংযোগকারী জানান, শুধু আফজাল নয় এই রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে তার মত আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপ পুরো কামরাঙ্গিরচর এলাকায় আড়াই লক্ষ থেকে সাড়ে চারলক্ষ টাকা চুক্তিতে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। আর গ্যাস সংযোগের জন্য তিতাসের এক ঠিকাদারকে বিপুল অংকের টাকা দিয়ে আগেই কনটাক্ট করতে হয়। আর যে বা যারা এই তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগে জড়িত তারা প্রায় সবাই মাসিক চাঁদা পায়। উল্লেখ্য, কামরাঙ্গিরচরে ৭৫ শতাংশ গ্যাস সংযোগ অবৈধ বলে অনেক আগে থেকেই স্বীকৃত। কেউ ১/২ চুলার অনুমতি নিয়ে চালাচ্ছে ৫ থেকে ১২টি চুলা আবার ৮ থেকে ১০টি চুলার অনুমতি নিয়ে চালাচ্ছে ১৫ থেকে ২২টি চুলা।

এই গ্যাস নিয়ে যেন অরাজকতার শেষ নেই। সরকারের বা তিতাসের গ্যাস কিন্তু ভাড়া পায় কিছু অসাধু ও রাজনৈতিক দুষ্টচক্র এবং সরকারী কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী। আর গ্যাসের বৈধ গ্রাহকরা পাচ্ছেনা তাদের ন্যায্য গ্যাস। বছরের পর বছর যুগের পর যুগ বিল পরিশোধ করেও গ্যাস মিলছে না বৈধ গ্রাহকদের ঘরে কিন্তু অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগকারীদের কাছে পর্যাপ্ত গ্যাস থাকে।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরপর অনেকবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও জরিমানা করা হলেও বাস্তবপক্ষে তা কোনপ্রকার কাজে আসছেনা। কারণ এলাকাবাসী জানান, বিএনপি জামায়াত সরকারের সময়ে যারাই অবৈধ সংযোগ দিয়েছিল তারাই আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে সক্রিয় ছিল এখন ক্ষমতার পালাবদলে ঐচক্রটি ফুলেফেপে আরও শক্তিশালী হয়ে গেছে। এখন তাদের দাপটে স্থানীয় পুলিশ থেকে সাধারন মানুষ সবাই ভয়ে চুপ থাকে।

তিতাস কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে  তিতাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনাতো দূরের কথা, অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হলে প্রয়োজন স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদন ও গ্যাস সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের সংকট থাকায় তিতাস কর্তৃপক্ষকে সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হয়। এবং ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া স্বাভাবিকভাবে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মত কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনা তিতাস কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উপরিউক্ত আইনটি সকল ধরনের চাহিদার যোগান দিতে পারেনা বলেও অভিমত দেন তিতাসের অভিজ্ঞকর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৪০ নং আইন বাংলাদেশ গ্যাস আইন ১০ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই আইনের ১০নং ধারার ২ উপ-ধারার ১ এ বলা হয়েছে, কোন গৃহস্থালী গ্রাহক অথবা বাণিজ্যিক গ্রাহক অথবা শিল্প, মৌসুমী বা ক্যাপটিভ পাওয়ার বা সিএনজি স্টেশন বা চা বাগান শ্রেণীভুক্ত গ্রাহক অথবা বিদ্যুৎ ও সার শ্রেণীভুক্ত গ্রাহকের নিম্নবর্ণিত যে কোন কাজ হইবে একটি অপরাধে বা এই ধরনের যেকোন কোন অপরাধের দায়ে-

(ক) কোন গৃহস্থালী গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ৩ (তিন) মাস কারাদন্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে উক্ত ব্যক্তি অন্যূন ৩ (তিন) মাস এবং অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ডে এবং অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডনীয় হইবে।

(খ) কোন বাণিজ্যিক গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ডে বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে তিনি অন্যুন ৬ (ছয়) মাস এবং অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক ৪০ (চল্লিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে।

(গ) কোন শিল্প, মৌসুমী বা ক্যাপটিভ পাওয়ার বা সিএনজি স্টেশন বা চা বাগান শ্রেণীভুক্ত গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদন্ডে বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে তিনি অন্যূন ১ (এক) বৎসর এবং অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক ২ (দুই) লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে। এবং

(ঘ) কোন বিদ্যুৎ ও সার শ্রেণীভুক্ত গ্রাহক দোষী সাব্যস্ত হইলে, তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক ২ (দুই) লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিলে তিনি অন্যুন ২ (দুই) বৎসর এবং অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে।

উক্ত আইনে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা আদৌ কি সম্ভব? একদিকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় বিড়ম্বনা অন্যদিকে ক্ষতির তুলনায় অপ্রতুল শাস্তির কারণে পুরো এলাকার বাসিন্দারাই এখন অবৈধ গ্যাস সংযোগে ব্যস্ত। এর অন্যকারণ হলো, যারা আগে বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়েছিল তাদের গ্যাস লাইনে গ্যাস থাকেনা কিন্তু অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিলে নিজেদের ইচ্ছেমত বড় সাইজের পাইপ সংযোগ দিয়ে বেশিবেশি গ্যাস পাওয়া যায়। তাই সবাই অবৈধ গ্যাসের দিকেই ঝুঁকছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।

এলাকায় অভিযুক্ত আসামীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার নতুন গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেনা তাই আমরা অবৈধ সংযোগ নিতে বাধ্য হই। ঢাকা শহরে বাঁচতে গ্যাসের বিকল্প নাই, তাই নিজের ব্যবসা কিংবা পরিবারকে বাঁচাতে হলে যেকোন উপায়েই হউক গ্যাস নিয়ে থাকি। টাকা ছাড়াতো নিচ্ছিনা, গ্যাস মিস্ত্রি, স্থানীয় নেতা, পুলিশ সবাইকে দিয়েই গ্যাস সংযোগ নেয়া হয়। প্রতিমাসে ভাড়াও দিয়ে থাকি কারা কারা জড়িত আপনারা সবই জানেন। কিন্তু তাদের প্রভাবে আমরা তাদের নাম মুখে আনতে পারব না। ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করে, জরিমানা দেই, প্রয়োজনে জেল খাটব, একদিকে জেলে ঢুকব আরেক দিকে জামিন নিয়ে চলে আসব, এতে কোন সমস্যা নাই। তারপরও আমাদের লাভ। এসব কথা বলছিলেন, অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে দন্ডিত হওয়া এক আসামী।

উল্লেখ্য, রাঙ্গিরচরবাসী গ্যাস সঙ্কটে রয়েছে দীর্ঘদিন। গ্যাসের লাইন আছে কিন্তু চুলো জ্বলেনা গ্যাস স্বল্পতায়। বছর পেরিয়ে যুগ পার হয়ে যাচ্ছে পর্যাপ্ত গ্যাস কামরাঙ্গিরচর, হাজারীবাগ ও লালবাগবাসী নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস পায়নি। সেই বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমল থেকেই কামরাঙ্গিরচরে বিভিন্ন কারখানা তৈরি করতে শুরু করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সময়েও এই সিন্ডিকেট সাথে জড়িত ছিল। এই গ্যাসের ব্যবসা করে স্থানীয় অনেক নেতাই বিপুল অর্থ সম্পদ করেছেন এবং তাদের অনেকের নামের সাথেও গ্যাস যুক্ত হয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অনেকে পালিয়ে গেলেও বর্তমানে এখন নতুন দলের গ্যাস সিন্ডিকেট দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গিরচরে। রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয়ে পুরো এলাকাটাকে নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। আওয়ামীলীগের সময়ে অনেকে থানা পুলিশ কিংবা তিতাসে অভিযোগ দিতে পারলেও তবে বর্তমানে বিবদমান পরিস্থিতিতে কেউ অভিযোগ দেয়ার সাহস পাচ্ছিলনা।

আজ স্থানীয়দের সাথে এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একতায় রাস্তায় প্রতিবাদ জানায় এবং বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে স্থানীয়রাই গ্যাস টানার পাম্প উদ্ধার করে কিন্তু তিতাসের লোক না থাকায় তাদের পাম্পগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। এরপর থেকেই কারখানায় গিয়ে অভিযান চালানো মানুষকে গ্যাস সিন্ডিকেটের সদস্যরা গিয়ে হুমকি ধামকি ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এই ব্যাপারে স্থানীয় সেনাবাহিনীর সহযোগীতা নিলে, তারা তিতাসের সহযোগীতা নিতে পরামর্শ দেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।