ঢাকা ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তামাকপণ্যে কঠোর কর ও নজরদারির দাবি তামাকবিরোধী জোটের

তামাকপণ্যে কঠোর কর আরোপ, সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক ব্যবস্থা চালু এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকে কার্যকর নজরদারির দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশে তামাকপণ্যের কর কাঠামো জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। এতে একাধিক মূল্যস্তর থাকার কারণে তামাক কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিতে পারছে। এর ফলে সরকার যেমন বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যও চরম ঝুঁকিতে পড়ছে।

তারা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর উৎপাদন দ্বিগুণ হলেও তাদের মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ। অথচ একই সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি। এই পরিস্থিতির অবসানে অ্যাড ভেলোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক চালু করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জর্দা ও গুলসহ ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে এখনো কার্যকর কর ব্যবস্থা ও তদারকি নেই। দেশে এ ধরনের পণ্যের প্রায় ৮০০টির বেশি ব্র্যান্ডের অধিকাংশেরই কোনো লাইসেন্স নেই, নেই নির্ধারিত ব্যান্ডরোল ও স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা। যার ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে এবং জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

তামাক কর ফাঁকি ঠেকাতে ডিজিটাল ট্যাক্স ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালুর ওপরও গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, বিদেশি সিগারেটের প্যাকেটে ব্যান্ডরোল না থাকায় সরকারের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। তাই তামাকপণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত সব প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনা, নিয়মিত বাজার তদারকি এবং এনবিআর ও ভোক্তা অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশে তামাক চাষে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি ঘটছে। গত এক বছরে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বেড়েছে, যা পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করলে দেশের আমদানি নির্ভরতা কমত।

তারা তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ, ধোঁয়াবিহীন তামাকে ব্যান্ডরোল ও ডিজিটাল নজরদারি চালু, বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং, নিয়মিত বাজার মনিটরিং, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ এবং তামাক পাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহালের দাবি জানায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়ক সাইফুদ্দিন আহমেদ, প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, নীতি বিশ্লেষক মাহবুবুল আলম তাহিন, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা, মাসুম বিল্লাহ, গবেষক নাসিরুদ্দিন শেখ এবং এইড ফাউন্ডেশনের শাগুফতা সুলতানা।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

তামাকপণ্যে কঠোর কর ও নজরদারির দাবি তামাকবিরোধী জোটের

আপডেট সময় : ১০:২৫:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

তামাকপণ্যে কঠোর কর আরোপ, সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক ব্যবস্থা চালু এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকে কার্যকর নজরদারির দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশে তামাকপণ্যের কর কাঠামো জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। এতে একাধিক মূল্যস্তর থাকার কারণে তামাক কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিতে পারছে। এর ফলে সরকার যেমন বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যও চরম ঝুঁকিতে পড়ছে।

তারা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর উৎপাদন দ্বিগুণ হলেও তাদের মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ। অথচ একই সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি। এই পরিস্থিতির অবসানে অ্যাড ভেলোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক চালু করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জর্দা ও গুলসহ ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে এখনো কার্যকর কর ব্যবস্থা ও তদারকি নেই। দেশে এ ধরনের পণ্যের প্রায় ৮০০টির বেশি ব্র্যান্ডের অধিকাংশেরই কোনো লাইসেন্স নেই, নেই নির্ধারিত ব্যান্ডরোল ও স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা। যার ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে এবং জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

তামাক কর ফাঁকি ঠেকাতে ডিজিটাল ট্যাক্স ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালুর ওপরও গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, বিদেশি সিগারেটের প্যাকেটে ব্যান্ডরোল না থাকায় সরকারের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। তাই তামাকপণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত সব প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনা, নিয়মিত বাজার তদারকি এবং এনবিআর ও ভোক্তা অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশে তামাক চাষে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি ঘটছে। গত এক বছরে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বেড়েছে, যা পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করলে দেশের আমদানি নির্ভরতা কমত।

তারা তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ, ধোঁয়াবিহীন তামাকে ব্যান্ডরোল ও ডিজিটাল নজরদারি চালু, বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং, নিয়মিত বাজার মনিটরিং, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ এবং তামাক পাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহালের দাবি জানায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়ক সাইফুদ্দিন আহমেদ, প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, নীতি বিশ্লেষক মাহবুবুল আলম তাহিন, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা, মাসুম বিল্লাহ, গবেষক নাসিরুদ্দিন শেখ এবং এইড ফাউন্ডেশনের শাগুফতা সুলতানা।