ভারতীয় একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (২৩ মে) ভারতের প্রথম সারির একাধিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। এ কোম্পানিটি কলকাতায় নিজেদের কার্যক্রম চালায়।
সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, কলকাতাভিত্তিক ওই প্রতিরক্ষা কোম্পানির কাছ থেকে নৌবাহিনীর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের (১৮০ কোটি রুপি) টাগ বোর্ড কেনার কথা ছিল বাংলাদেশের।
গত শনিবার ভারত তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপরই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীর টাগ বোট কেনার ক্রয়াদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত আসল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের সেভেন সিস্টার্সকে স্থলবেষ্টিত অঞ্চল হিসেবে আখ্যা করায় এবং এই অঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশকে অভিহিত করায় এবং চীনকে এই অঞ্চল ব্যবহার করে ব্যবসা প্রসারণের প্রস্তাব দেওয়ায় ভারত সরকার তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (জিআরএসই) সঙ্গে ১৮০ কোটি রুপির চুক্তি বাতিল করেছে। এই কোম্পানিটি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চালায়।
এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি জাহাজ তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে। ভারতীয় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজের কাজও তারা করে।
কোম্পানিটি দেশটির পুঁজি বাজারকে বলেছে, “আমরা আপনাদের জানাচ্ছি বাংলাদেশ সরকার তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।”
সংবাদমাধ্যম হিন্দুর বিজনেস লাইনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার ও এই কোম্পানিটির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অর্ডারটি বাতিল করা হয়েছে।
কলকাতাভিত্তিক এ কোম্পানিটি ৮০০ টন ওজনের টাগ বোটটি তৈরির আদেশ পেয়েছিল বলে জানিয়েছে অপর সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
পিএসইউওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, টাগ বোটটি ৬১ মিটার লম্বা এবং ১৫ দশমিক ৮০ মিটার প্রশস্ত হতো। এটির গভীরতা হতো ৬ দশমিক ৮০ মিটার।
এই টাগ বোটে উচ্চ বোলার্ড টানার সক্ষমতা থাকত। সামনের দিক দিয়ে এটির টানার ক্ষমতা থাকত ৭৬ টন, পেছন ৫০ টন।
এটি দীর্ঘ দূরত্বে জাহাজ টেনে আনা, বার্থিংয়ে সহায়তা প্রদান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, অগ্নিনির্বাপণ এবং সমুদ্রে সীমিত দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছিল।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় এ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে টাগ বোট কেনার চুক্তিটি হয়েছিল।
২০২৩ সালে ঢাকা ও নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট (ঋণ সহায়তা) চুক্তি হয়। এটির আওতায় এই টাগ বোটটি ছিল প্রথম বড় কোনো ক্রয়াদেশ।
ভারতীয় এই ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্য আরও অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যেগুলো সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে শুরু হয়। ইটিভি ভারতের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে বাংলাদেশকে ভারত লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ৮ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।