হজ ও ওমরার গুরুত্বপূর্ণ আমল সাফা-মারওয়ায় সায়ী করা। সায়ী শব্দটি আরবি। অর্থ- দ্রুত চলা ও চেষ্টা করা। ইসলামি শরিয়তে সাফা-মারওয়া দুই পাহাড়ের মাঝে বিশেষ রীতিতে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে সায়ী বলা হয়।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তিই বাইতুল্লাহর হজ করবে বা ওমরা করবে তার জন্য এ দুটোর প্রদক্ষিণ করাতে কোনও গুনাহ নেই। কোনও ব্যক্তি স্বত:স্ফূর্তভাবে কোনও কল্যাণকর কাজ করলে আল্লাহ অবশ্যই গুণগ্রাহী (এবং) সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৮)
হজ ও ওমরায় সাফা-মারওয়া সায়ি করা ওয়াজিব। কেউ তা করতে ভুলে গেলে বা ইচ্ছাকৃত না করলে তার ওপর কাফফারা হিসেবে দম ওয়াজিব হবে।
সায়ীর মূল রোকন
সায়ির আসল রোকন হলো—সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী নির্দিষ্ট পথে হেঁটে যাওয়া। কেউ যদি এই নির্ধারিত পথ ব্যতীত অন্যদিকে গিয়ে হাঁটে, তবে তার সায়ী শুদ্ধ হবে না।
সায়ী আদায়ের শর্তাবলি
১. সায়ী নিজ উদ্যোগেই করতে হবে। কেউ শারীরিকভাবে অক্ষম হলে বাহনে উঠেও তা করতে পারেন, তবে অন্য কেউ তার পক্ষে সায়ী সম্পন্ন করতে পারবে না, যদি না অজ্ঞান বা অতিরিক্ত অসুস্থ হন।
২. কমপক্ষে চার চক্কর তাওয়াফ শেষ হওয়ার পরই সায়ী শুরু করা উচিত। এর আগে সায়ী শুরু করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
৩. ইহরাম অবস্থায় থেকে সায়ী করা আবশ্যক। ইহরাম ছাড়া সায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।
৪. সায়ী শুরু করতে হবে সাফা পাহাড় থেকে। মারওয়া থেকে শুরু করলে প্রথম চক্কর হিসাব হবে না।
৫. অধিকাংশ চক্কর সম্পন্ন করতে না পারলে সায়ী অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
৬. হজের সায়ী অবশ্যই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
সায়ীর ওয়াজিব বিষয়সমূহ
১. তাওয়াফ শেষ করে সায়ি শুরুর সময় শরীর ও কাপড় অপবিত্রতা থেকে পরিষ্কার থাকতে হবে।
২. সাফা থেকে শুরু করে মারওয়াতে শেষ করা আবশ্যক।
৩. শারীরিক সক্ষমতা থাকলে পায়ে হেঁটে সায়ি করতে হবে। অকারণে বাহনে চললে দম (বিকল্প কাফফারা) আদায় করতে হবে।
৪. মোট সাতটি চক্কর সম্পূর্ণ করা জরুরি। চারটি ফরজ ও বাকি তিনটি ওয়াজিব। কেউ যদি শেষের তিনটি না করে, তবে প্রতি চক্করের পরিবর্তে নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে।
৫. ওমরার সময় ইহরাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বহাল রাখা ফরজ।
৬. সাফা-মারওয়ার মাঝের সম্পূর্ণ পথ অতিক্রম করাই সায়ির অপরিহার্য অংশ।
সায়ীর সুন্নত দিকসমূহ
১. হাজরে আসওয়াদের ইস্তিলাম করে মসজিদ থেকে সায়ির দিকে রওনা হওয়া উত্তম।
২. তাওয়াফ শেষ করার পরপরই সায়ি শুরু করলে সুন্নতের প্রতি আমল হয়।
৩. সাফা ও মারওয়ার উঁচু স্থানে উঠে কাবার দিকে মুখ করে দোয়া করা।
৪. প্রতিটি চক্কর ধারাবাহিকভাবে শেষ করা সুন্নত।
৫.সেই তাওয়াফের সায়ি করা উচিত যা পবিত্রতা সহকারে সম্পন্ন হয়েছে এবং কাপড় ও স্থান পবিত্র ছিল।
৬. সবুজ বাতির মধ্যবর্তী অংশে দ্রুত পায়ে হাঁটা (পুরুষদের জন্য সুন্নত আমল)।