নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়—এই একটি বাক্য এখন গোটা দুনিয়ার যন্ত্রণার প্রতীক। আর ঠিক এই আবহেই অনসাম্বল থিয়েটার মঞ্চে এনেছে তাদের ৪৬তম নাট্যপ্রযোজনা ‘আই কান্ট ব্রিদ’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয় নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন, যা দর্শক হৃদয়ে তীব্র রেখাপাত করে যায়। এটি একটি নাট্যকার নির্দেশিত একক নাট্য প্রযোজনা, যা ছুঁয়ে যায় সকল দর্শকের ভিতরটা।
নাটকটির রচয়িতা ও নির্দেশক বায়োগ্রাফিক্যাল নাট্যকার জুয়েল কবির। পুরো নাটকটি একক অভিনয়ে প্রাণবন্ত করে তোলেন অনসাম্বলের সভাপতি মো. আবুল মনসুর।
‘আই কান্ট ব্রিদ’ মূলত একটি ব্যক্তিগত আত্মজীবনী মনে হলেও, এর পরিধি ছড়িয়ে পড়ে গোটা সমাজ ও বিশ্বজুড়ে। ব্যর্থ প্রেম, দীর্ঘ বেকারত্ব, সামাজিক নিপীড়ন—সব মিলিয়ে চরিত্রটির কণ্ঠে উঠে আসে এমন এক আর্তনাদ, যা আমাদের সবার ভিতরকার চাপা কান্নাকে জাগিয়ে তোলে।
নাট্যকার জুয়েল কবির জানান, নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন ২০২৪ সালের আগস্টের আগে, কিন্তু সে সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মঞ্চায়ন সম্ভব হয়নি। তার ভাষায়, “এই নাটক এখনো ততটাই প্রাসঙ্গিক যতটা তখন ছিল। সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি ঘরের ভিতরেও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কারণ ভয়, ভণ্ডামি আর সত্য চাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় আমাদের অস্তিত্ব দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।”
মো. আবুল মনসুর বলেন, “এ নাটকে গল্প আছে, কিন্তু সেই গল্পকে ছাপিয়ে গেছে বক্তব্য। সময় এতটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে যে, এখন কবিতা দিয়ে নয়, গদ্য দিয়েই সত্য বলা যায়। ঠিক যেমন সুকান্ত লিখেছিলেন—‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’”
তরুন বাচিক শিল্পী পলি পারভীন নাটক দেখে অনুভূতিতে জানায় শিল্প নির্দেশনায় বোনা হয়েছে নাটকের অনুভব এটা যেনো নাটক নয়, যেন একটি জীবন্ত স্বীকারোক্তি।
ভারতের ত্রিপুরার কবি তমাল শেখর দে-র ছায়া কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা নাটকটির সেট ও কস্টিউম পরিকল্পনায় ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রিবন খন্দকার, শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন ড. আইরিন পারভীন লোপা, অবয়ব শিল্পী হিসেবে ছিলেন শুভাশিস দত্ত তন্ময়। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন পলক ইসলাম, এবং আবহসংগীতে ছিলেন জুয়েল কবির ও এস এম সজিব ভূঁইয়া। মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন হাসিবুর তুষার, নুসরাত ইমাম বুল্টি, পলি পারভীন, টিপু সুলতান ও উজ্জ্বল চৌধুরীসহ অনসাম্বলের নিবেদিত সদস্যরা।
থিয়েটার চারনিক-এর দলপ্রধান রেজাউল করিম রেজার সঞ্চালনায় নাটকটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, নাট্যব্যক্তিত্ব কামাল বায়োজিদ।
মঞ্চায়ন শেষে সংক্ষিপ্ত অনুভূতি প্রকাশ করেন
অনসাম্বলের আজীবন সদস্য ও সাবেক সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী,বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌসিফ হোসেন ময়না,বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সংঘের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম এবং নাট্যশিক্ষক অধ্যাপক রিবন খন্দকার প্রমুখ।
তারা সবাই নাটকের সাহসী বক্তব্য ও মানবিক উপস্থাপনাকে গভীরভাবে প্রশংসা করেন। তাদের মতে, এই নাটক সময়ের এমন এক উচ্চারণ, যা শুধু থিয়েটারের পরিসরে সীমাবদ্ধ নয়—বরং একটি প্রজন্মের অভিজ্ঞতার প্রতিধ্বনি।
নাট্যকর্মী হাসিবুর তুষার বলেন এই অসামান্য নাট্যপ্রযোজনা যারা প্রথম মঞ্চায়নে দেখতে পারেননি, তাদের জন্য সুখবর হলো আগামী ২৩ মে২৫, শুক্রবার, সন্ধ্যা ৭টায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে ‘আই কান্ট ব্রিদ’ পুনরায় মঞ্চস্থ হবে।
অনসাম্বলের পক্ষ থেকে সকল দর্শক, নাট্যপ্রেমী ও বিবেকবান মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সিনিয়র অভিনেত্রী সাফিয়া খন্দকার রেখা বলেনএই সময়ে, এই নাটক না দেখলে বোধ হয় কিছু একটা মিস হয়ে যাবে।
দর্শকদের অনুভুতিতে একটা কথায় উঠে এসেছে
এই নাটক কেবল নাটক নয়—একটি আত্মজিজ্ঞাসা, একটি সাহসী স্বীকারোক্তি, একটি শ্বাসরুদ্ধ জীবনের বিবরণ।
‘আই কান্ট ব্রিদ’—দেখুন, শুনুন, অনুভব করুন।