দীর্ঘদিন ধরে নিজের অভিজ্ঞতা ও প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে অর্থলগ্নী ও চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত আনিছুর রহমান (আইডি: ৯৪, বি.পি নম্বর: ৮৫০৭১২১০৭১), এরই প্রতারণার শিকার হয়েছে ত্রিশাল উপজেলার অলহরি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার। অভিযোগ আছে, আনিছুর রহমান তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন অবৈধভাবে সুদের ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং মিথ্যা মামলা করে ও প্রতারণার মাধ্যমে ও প্রভাব দেখিয়ে অর্থবিত্ত করেছেন। তার এমন প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন কামরুল ইসলাম নামের তারই এলাকার এক যুবক।
অভিযোগকারী মো. জাকির হোসেন বলেন, তাদের পিতা মফিজ উদ্দিন একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা সুখী, উচ্চশিক্ষিত এবং স্বচ্ছল পরিবার। পারিবারিকভাবে তারা একটি এগ্রো ফার্ম, ফিড ও ভেটোরিনারি ফার্মাসি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। কিন্তু আনিছুর রহমান বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ছোট ভাই কামরুল ইসলামের সঙ্গে সুদের বিনিময়ে লেনদেন শুরু করেন।
প্রথমে ২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা সুদ নেওয়া শুরু করেন আনিছুর, পরে আরও ৮ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা সুদ আদায় করতে থাকেন। প্রায় দুই বছরে কামরুল ইসলাম তাকে ৯,৬০,০০০ টাকা পরিশোধ করেন। করোনা মহামারির সময়ে ব্যবসায় ক্ষতির কারণে নিয়মিত সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলে, আনিছুর রহমানে ভাই মুক্তাদির ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের মালিক তার মাধ্যমে ১ কোটি টাকার ঋণ তুলে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৩টি সাক্ষরিত ব্ল্যাংক চেক, কামরুলের হাতে স্বাক্ষরিত মায়ের নামে আরও ৩টি চেক এবং ৩টি অলিখিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প কৌশলে হাতিয়ে নেন এই আনিছুর।
এরপর তার বৃদ্ধা মায়ের নামে ভুয়া বায়না দলিল এবং ৩৬ লক্ষ টাকার চেক ডিসওনার মামলা (মোকদ্দমা নং-৭৯১/২৩) দায়ের করেন। মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হলেও আদালতে মামলা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে পরিবারের কাছ থেকে আরও ৪১,০০০ টাকা হাতিয়ে নেন এবং গোপনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিয়ে বৃদ্ধা মাকে জেল হাজতে পাঠান।
এদিকে আনিছুরের দেয়া সুদে অর্থলগ্নীর টাকার হিসেব আপোষে শেষ করার লক্ষ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে নগদ ১ লক্ষ টাকা, গাছ বিক্রির মাধ্যমে ৬০ হাজার এবং পরে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এছাড়াও আনিছুরের বাড়ি নির্মাণে ইট, সিমেন্ট, সাবমার্সিবল পাম্প বাবদ প্রায় ৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়, যার চালান সংযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগকারীর দাবি, দিনমজুর পিতার সন্তান আনিছুর রহমান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে পুলিশের চাকরি নেন। গত ১৭ বছরে তিনি এখন প্রায় ৫-৮ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। তার সকল সম্পদ স্ত্রীর নামে, যিনি গৃহিণী হয়েও কোটি টাকার লেনদেন পরিচালনা করেন। জাকির হোসেন দাবি করেন, আনিছুর রহমান পুলিশের ছত্রছায়ায় থেকে প্রতারণার চক্র গড়ে তুলেছেন এবং নিজের বাহিনী দিয়ে নিরীহ মানুষদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ আদায় করেন। কামরুলের বড়ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, আনিছুর রহমান তার দলবল নিয়ে আমার বাসায় এসে জোরপূর্বক আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয় এবং তার আরেক ভাই জাকির হোসেনকে ত্রিশাল থেকে বাসায় ডেকে নিয়ে এসে তার বাহিনীরকে দিয়ে তাকে বেদম প্রহার ও মারধর করা হয়। মারধর করার এক পর্যায়ে আমার পিতা ভয়ে ও ক্ষোভে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি স্ট্রোক করেন। এই সময় বাড়ীর সবাইকে এলাকাছাড়া করা ও জীবন নাশের হুমকি দেয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ত্রিশাল থানায় তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ২২/৭/২০২৩ ইং একটি অভিযোগও করা হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। এলাকায় তার ভয়ে ভীত সন্তস্ত্র অনেক অসহায় পরিবার, যারা তার কাছ থেকে সুদে অর্থলগ্নী নিয়েছেন।
ভূক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্য মোঃ মফিজ উদ্দিনের পরিবার এই পুলিশ সদস্য আনিছুর রহমানের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্তের দাবী করেছেন। এবং এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে প্রধান উপদেষ্টাসহ আইন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় ভূক্তভোগীরা।