নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার বংশাল থানার পুলিশ আবারও বড় ধরনের একটি অভিযান চালিয়ে জব্দ করেছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ভারতীয় থ্রি-পিস ও শাড়ি। তিন দিনের ব্যবধানে এটিই তাদের দ্বিতীয় সফল অভিযান।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ সকালে তাতীবাজার মোড়ের এস এ পরিবহনের বংশালের একটি শাখা হতে উক্ত মালামাল ডেলিভারি নিয়ে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ গিয়ে সে ভ্যান আটকে দেয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে বংশাল থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মোঃ সোহেল জানান, পুলিশ গিয়ে পণ্যের বৈধ সকল ডক্যুমেন্টস চাইলে ভ্যান চালক ও একজন গ্রহীতা ডক্যুমেন্টস পাঠাচ্ছে দিচ্ছে বলে ও নানান রকম তালবাহানা করে ২ ঘন্টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখে পুলিশ ফোর্সকে। পরে এসএ টেলিভিশনের স্টিকার সম্বলিত একটি প্রাইভেট কারের করে আসা আসাদ নামের একজন এসে পুলিশের সাথে বাক বিতন্ডা শুরু করেন। তিনি বলেন, আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন করচ্ছেন, এসব পণ্য বৈধ ও এগুলো বৈধ কিনা অবৈধ সেটা দেখার এখতিয়ার একমাত্র কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। পরে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ সোহেল আহমেদ এসে তার সাথে কথা বললে তিনি তার উপরও ক্ষেপে যান। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম এসে তাদেরকে বৈধ ডক্যুমেটস দেখানোর জন্য সময় দিলে তারা মোবাইলে একটি ছবি দেখিয়ে বলে এটা মালামালের বৈধ ডক্যুমেন্টস।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, মালামাল জব্দ করার কাজে এসএ পরিবহনের জিএম আসাদ বাঁধা দিতে আসলে তাকে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে বললে তিনি ব্যর্থ হলেই আমরা তাকে বললাম, এসব পণ্য আমদানির বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে পারলেই আমরা জব্দ না করে চলে যাব। কিন্তু তারা আমাকে স্মার্ট ফোনে দেখানো একটি ছবি দিয়ে কিভাবে বুঝবো এসব বৈধ? তাই বলেছি, মূল কাগজপত্র আনা হলেই আমরা এসব পণ্য তাদের কাছে ফেরত দিতে বাধ্য নতুবা আমরা এসব পণ্য আদালতের মাধ্যমে নিতে হবে।
পুলিশ জানায়, তারা পণ্যের বৈধ কাগজপত্র দেখানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের দুই ঘণ্টার সময় দিয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। এরপর উপস্থিত জনগণ ও সংবাদকর্মীদের সামনে পণ্যের প্যাকেট খুলে দেখা হয়। উক্ত মালামাল গ্রহীতা বা মালিক যেহেতু জব্দকৃত মালামালের বৈধ কাগজপত্র নিয়ে দুই ঘন্টায় আসতে পারেনি, তাই নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, এসব পণ্য বিদেশি এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয়েছে। পরবর্তীতে এগুলো গণনা করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত জানা যায়, থানায় একটি মামলা হয় যা আগামীকাল আদালতে প্রেরণ করা হবে।
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “বংশাল এলাকা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগ নিয়ে নিয়মিত বিদেশি পণ্য চোরাই পথে ঢুকিয়ে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। সরকার ও পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, গত ৭ জুলাই ২০২৫ ইং তারিখেও এই ধরনের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বিদেশি পণ্য শনাক্ত করে পুলিশ আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের ভাষ্য মতে, তখনও এইভাবে এসএ পরিবহন থেকে বিভিন্ন লোকজন এসে হুমকি ধামকি দিয়েছিল এমনকি তাদের মিডিয়া এসএ টিভিতে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও থানার পুলিশের বিরুদ্ধে মালামাল লুটের নিউজ করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেইসব মালামালের বৈধ দাবীদার হিসেবে কেউ আদালতে হাজির হয়নি।
এ বিষয়ে লালবাগ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মোঃ জসিম উদ্দীন বলেন, “অপরাধ দমন এবং অবৈধ ব্যবসা বন্ধে আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাচ্ছি। দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় পুলিশের এই অভিযানগুলো ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।”
উল্লেখ্য, এর আগেও ২৫ মার্চ প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার বিদেশি পণ্য ও ৩০ মার্চ প্রায় ১১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার ভারতীয় শাড়ি জব্দ করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া ওসি রফিকুল ইসলাম যোগদানের পরপরই সাড়ে ৫ টন নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে আদালতে পাঠান।