রংপুরের বদরগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উক্ত সংঘর্ষে লাভলু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত লাভলু মিয়া বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুরের রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের সমর্থক ছিলেন।
লাভলুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছেলে রায়হান মিয়া এবং বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান।
স্থানীয় সূত্র ও থানা পুলিশের বরাতে জানা যায়, শহরের শহীদ মিনার এলাকার একটি দোকান নিয়ে বিরোধের জেরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। থানাপাড়ার জাহিদুল হক নামের এক ব্যক্তি বিএনপির নেতা ইসতিয়াক বাবুর মালিকানাধীন একটি দোকান ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু ভাড়ার মেয়াদ শেষ না হলেও দোকানটি ফেরত চাওয়ায় বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এর জের ধরে গত বুধবার সন্ধ্যায় ইসতিয়াক বাবুর নেতৃত্বে বিএনপির এক পক্ষ জাহিদুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলায় জাহিদুল হক, লাভলু মিয়া ও আরও তিনজন গুরুতর আহত হন। আহত লাভলুকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার জেরে আজ শনিবার দুপুরে শহীদ মিনার এলাকায় জাহিদুলের পক্ষের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের আয়োজন করলে বিএনপির আরেকটি পক্ষ এসে ব্যানার ছিঁড়ে দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দ্রুত পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক মানিক এবং বদরগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সরওয়ার জাহান মানিক।
অভিযোগ উঠেছে, ব্যানার ছিঁড়ে দেওয়া ও হামলার পেছনে জেলা ও উপজেলা বিএনপির একটি অংশ সক্রিয় ছিল, যাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেন সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার।
ঘটনার প্রেক্ষিতে রংপুর জেলা বিএনপি তিন নেতার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। তারা হলেন—সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার, চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক এবং উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিক।
বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, “লাভলু মিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে মৌখিকভাবে শুনেছি, তবে এখনো কোনো লিখিত নথি পাইনি। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।