যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে বিশ্বব্যাপী পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
২ এপ্রিল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রাতারাতি বিশ্ব শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন লক্ষ্য করা গেছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে এশিয়ার দেশগুলোতে।
বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিবিসির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল ইসলাম জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন শুল্ক রাজস্ব একশ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার দেখা যাবে, যা ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার সময়কার রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতির স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনবে।
নতুন নীতিমালায় ট্রাম্প প্রশাসন সব আমদানি পণ্যের ওপর সার্বজনীনভাবে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা কার্যকর হবে শুক্রবার ৪ এপ্রিল রাত থেকে। পাশাপাশি, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেসব দেশের পণ্যের ওপর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে।
শুল্কের আঘাত সবচেয়ে বেশি পড়েছে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর। চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, এমনকি বাংলাদেশও এই কঠোর শুল্কনীতির আওতায় এসেছে। এতে হাজার হাজার কারখানা ও রপ্তানিনির্ভর কোম্পানি ঝুঁকিতে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক, খেলনা এবং ইলেকট্রনিকসের দাম দ্রুত বাড়বে, যা ভোক্তা পর্যায়ে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি, যেসব কোম্পানি এশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা পরিচালনা করত, তাদের ব্যবসায়িক মডেলই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত কোনো আলোচনার বিষয় নয়, বরং এটি *জাতীয় জরুরি অবস্থা* হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থানের মূল লক্ষ্য—যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি শূন্যে নামিয়ে আনা এবং দেশের শিল্পখাতকে সুরক্ষা দেওয়া।
শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই টোকিও, সিউল, সাংহাইসহ এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। অনেক বহুজাতিক কোম্পানি এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে চীনের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে নীতিগত স্থিতিশীলতা এবং বৃহৎ বাজার রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে এক নতুন মোড়ের দিকে নিয়ে যাবে, যার প্রভাব বহুমাত্রিক এবং দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।