ঢাকা ০৭:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
যুব মহিলালীগ নেত্রী লুনা হোসেন এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগে মানববন্ধন ট্রাম্পের ‘শুল্ক বোমা’র আগে চীনের রপ্তানি ১২.৪% বৃদ্ধি ভারত থেকে ইউনুসকে সতর্ক বার্তা শেখ হাসিনার বেকার সাংবাদিক রাশেদুলের নিগ্রহের শিকার গৌতম আবারও ৮ লক্ষ টাকার ভারতীয় শাড়ী ও থ্রিপিচ জব্দ করেছে বংশাল থানা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ১৮ রানে চেন্নাই কে হারালো পাঞ্জাব এসএ টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। মাগুরার আছিয়া ধর্ষণ: ডিএনএ রিপোর্টে হিটু শেখের জড়িত থাকার প্রমাণ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেন কোরিয়ার বিনিয়োগ প্রতিনিধিদল
সদকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দান

সদকাতুল ফিতর আদায়ের নিয়ম ও গুরুত্ব

  • প্রদীপ জয়
  • আপডেট সময় : ০২:৪৪:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “রমজানের রোজাকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ করতে এবং দরিদ্রদের খাদ্যের সংস্থান করতে সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে এটি আদায় করবে, তা গ্রহণযোগ্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে, আর নামাজের পর দিলে তা সাধারণ দানের পর্যায়ে পড়বে।” (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৯)

সদকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দান, যা ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই আদায় করা হয়। এটি শুধু একটি সাধারণ দান নয়, বরং রমজানের রোজা পালনের মধ্যে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে তা পূরণ করার একটি মাধ্যম এবং দরিদ্রদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক দান।

‘সদকাতুল ফিতর’ শব্দটি আরবি থেকে এসেছে। ‘সদকা’ অর্থ দান, আর ‘ফিতর’ অর্থ রোজা ভঙ্গ করা বা উন্মুক্তকরণ। অর্থাৎ, রোজার মাস শেষ হওয়ার পর ঈদের দিন গরিব-দুঃখীদের মাঝে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য।

সদকাতুল ফিতর যাদের ওপর ওয়াজিব;
সদকাতুল ফিতর দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক, তবে কিছু শর্ত রয়েছে—

✅ যার কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ রয়েছে, তাকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।
✅ পরিবারের নাবালেগ সন্তানের ফিতরাও তার অভিভাবক আদায় করবেন।
✅ নবজাতক যদি ঈদের দিন সুবহে সাদিকের আগে জন্ম নেয়, তবে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা দেওয়া আবশ্যক।

সদকাতুল ফিতর আদায়ের সঠিক সময়
✅ ঈদের নামাজের আগে** আদায় করাই উত্তম।
✅ তবে কেউ যদি আগেভাগেই দিয়ে দিতে চায়, তাহলে **এক-দুই দিন আগেও ফিতরা দেওয়া যায়** (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)।
✅ নামাজের পর দিলে সেটি সাধারণ সদকার মর্যাদা পাবে, সদকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে না।

সদকাতুল ফিতর কীভাবে আদায় করবেন?
সদকাতুল ফিতর মূলত খাবার বা খাদ্যসামগ্রী দিয়ে আদায় করা হয়। তবে বর্তমান সময়ে নগদ অর্থ দিয়েও এটি আদায় করা যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এবং সাহাবিরা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে—
“রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সা’ (প্রায় ৩ কেজি) খেজুর বা যব সদকাতুল ফিতর হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।”(সহিহ বুখারি: ১৫১০)

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ (২০২৪ সালের হিসাব)
বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতি বছর সদকাতুল ফিতরের হার নির্ধারণ করে। সাধারণত, খাদ্যদ্রব্যের বাজারদর অনুযায়ী এটি পরিবর্তিত হয়।
২০২৪ সালে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ বাংলাদেশে নিম্নরূপ নির্ধারণ করা হয়েছে—

✅ সর্বনিম্ন: ১১৫ টাকা (যব বা খেজুরের নির্দিষ্ট পরিমাণের সমমূল্য)।
✅ সর্বোচ্চ: ৩,৩০০ টাকা (উচ্চমূল্যের খাবারের সমপরিমাণ)।

সদকাতুল ফিতর কারা পাবে?
সদকাতুল ফিতর **গরিব ও অসহায় মানুষদের জন্য নির্ধারিত**। নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা এটি পেতে পারেন—
🔹 দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তরা।
🔹 যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি।
🔹 যারা ঋণে জর্জরিত, কিন্তু পরিশোধ করতে পারছেন না।
🔹 মিসকিন (যাদের নিত্যদিনের আহারের নিশ্চয়তা নেই)।

সদকাতুল ফিতর আদায়ের লক্ষ্য ও উপকারিতা
✅ **গরিবদের ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দেওয়া।**
✅ **রমজানের রোজার মধ্যে থাকা ভুল-ত্রুটি শোধরানো।**
✅ **একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে কেউ অনাহারে থাকবে না।**
✅ **আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।**

সদকাতুল ফিতর ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা ধনী ও গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করে। ঈদুল ফিতরের আনন্দ শুধু ধনীদের জন্য নয়, বরং সমাজের অসহায় ও দরিদ্রদের জন্যও তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই সঠিক নিয়মে এবং সময়মতো সদকাতুল ফিতর আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের কর্তব্য।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

যুব মহিলালীগ নেত্রী লুনা হোসেন এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগে মানববন্ধন

সদকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দান

সদকাতুল ফিতর আদায়ের নিয়ম ও গুরুত্ব

আপডেট সময় : ০২:৪৪:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “রমজানের রোজাকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ করতে এবং দরিদ্রদের খাদ্যের সংস্থান করতে সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে এটি আদায় করবে, তা গ্রহণযোগ্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে, আর নামাজের পর দিলে তা সাধারণ দানের পর্যায়ে পড়বে।” (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৯)

সদকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দান, যা ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই আদায় করা হয়। এটি শুধু একটি সাধারণ দান নয়, বরং রমজানের রোজা পালনের মধ্যে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে তা পূরণ করার একটি মাধ্যম এবং দরিদ্রদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক দান।

‘সদকাতুল ফিতর’ শব্দটি আরবি থেকে এসেছে। ‘সদকা’ অর্থ দান, আর ‘ফিতর’ অর্থ রোজা ভঙ্গ করা বা উন্মুক্তকরণ। অর্থাৎ, রোজার মাস শেষ হওয়ার পর ঈদের দিন গরিব-দুঃখীদের মাঝে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য।

সদকাতুল ফিতর যাদের ওপর ওয়াজিব;
সদকাতুল ফিতর দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক, তবে কিছু শর্ত রয়েছে—

✅ যার কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ রয়েছে, তাকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।
✅ পরিবারের নাবালেগ সন্তানের ফিতরাও তার অভিভাবক আদায় করবেন।
✅ নবজাতক যদি ঈদের দিন সুবহে সাদিকের আগে জন্ম নেয়, তবে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা দেওয়া আবশ্যক।

সদকাতুল ফিতর আদায়ের সঠিক সময়
✅ ঈদের নামাজের আগে** আদায় করাই উত্তম।
✅ তবে কেউ যদি আগেভাগেই দিয়ে দিতে চায়, তাহলে **এক-দুই দিন আগেও ফিতরা দেওয়া যায়** (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)।
✅ নামাজের পর দিলে সেটি সাধারণ সদকার মর্যাদা পাবে, সদকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে না।

সদকাতুল ফিতর কীভাবে আদায় করবেন?
সদকাতুল ফিতর মূলত খাবার বা খাদ্যসামগ্রী দিয়ে আদায় করা হয়। তবে বর্তমান সময়ে নগদ অর্থ দিয়েও এটি আদায় করা যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এবং সাহাবিরা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে—
“রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সা’ (প্রায় ৩ কেজি) খেজুর বা যব সদকাতুল ফিতর হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।”(সহিহ বুখারি: ১৫১০)

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ (২০২৪ সালের হিসাব)
বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতি বছর সদকাতুল ফিতরের হার নির্ধারণ করে। সাধারণত, খাদ্যদ্রব্যের বাজারদর অনুযায়ী এটি পরিবর্তিত হয়।
২০২৪ সালে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ বাংলাদেশে নিম্নরূপ নির্ধারণ করা হয়েছে—

✅ সর্বনিম্ন: ১১৫ টাকা (যব বা খেজুরের নির্দিষ্ট পরিমাণের সমমূল্য)।
✅ সর্বোচ্চ: ৩,৩০০ টাকা (উচ্চমূল্যের খাবারের সমপরিমাণ)।

সদকাতুল ফিতর কারা পাবে?
সদকাতুল ফিতর **গরিব ও অসহায় মানুষদের জন্য নির্ধারিত**। নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা এটি পেতে পারেন—
🔹 দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তরা।
🔹 যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি।
🔹 যারা ঋণে জর্জরিত, কিন্তু পরিশোধ করতে পারছেন না।
🔹 মিসকিন (যাদের নিত্যদিনের আহারের নিশ্চয়তা নেই)।

সদকাতুল ফিতর আদায়ের লক্ষ্য ও উপকারিতা
✅ **গরিবদের ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দেওয়া।**
✅ **রমজানের রোজার মধ্যে থাকা ভুল-ত্রুটি শোধরানো।**
✅ **একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে কেউ অনাহারে থাকবে না।**
✅ **আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।**

সদকাতুল ফিতর ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা ধনী ও গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করে। ঈদুল ফিতরের আনন্দ শুধু ধনীদের জন্য নয়, বরং সমাজের অসহায় ও দরিদ্রদের জন্যও তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই সঠিক নিয়মে এবং সময়মতো সদকাতুল ফিতর আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের কর্তব্য।