পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে গতকাল জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হামলা চালিয়ে মিলিটারিসহ সাধারন মানুষকে জিম্মি করেছে পাকিস্তানের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী।
১১ মার্চ ২০২৫ মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হামলা করে ২১৪ জন যাত্রীকে জিম্মি করেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিল। তবে উক্ত ট্রেনে প্রায় ৪৫০ও অধিক যাত্রী ছিল বলে কর্তৃপক্ষ থেকে দাবী করা হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অন্তত ১০০ যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ১৬জন হামলাকারী জঙ্গি সেনা অভিযানে নিহত হয়েছে। এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আরও ৮০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে, তবে এখনও কিছু যাত্রী জিম্মি রয়েছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং ৪৮ ঘন্টার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দিলে জিম্মি করা লোকদের হত্যা করবে এবং এই ধরনের আরও হামলার হুমকি দিয়েছে এই বিদ্রোহী সংগঠনটি।
বিদ্রোহীরা দাবি করেছে যে, তারা ২১৪ জন যাত্রীকে জিম্মি করেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য। তারা বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে, অন্যথায় জিম্মিদের হত্যা এবং ট্রেনটি ধ্বংসের হুমকি দিয়েছে।
কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী এই ট্রেনটি বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় পৌঁছানোর পর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেললাইনের একটি অংশ উড়িয়ে দেওয়া হয়, যা ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয়। পরবর্তীতে, বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ট্রেনটি দখল করে যাত্রীদের জিম্মি করে।
হামলার সময় ট্রেনটিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ৪৫০ জন যাত্রী ছিলেন। জিম্মি যাত্রীদের মধ্য থেকে শিশুসহ অন্তত ১০৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আহত ১৭ জন যাত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৫৫ জন যাত্রী উদ্ধার হয়েছে এবং ২৭ বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। তবে, এখনও প্রায় ২১৪ জন যাত্রী বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি রয়েছেন। বিদ্রোহীরা কিছু জিম্মিকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যা উদ্ধার অভিযানকে জটিল করে তুলছে।
এই হামলা বেলুচিস্তানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান তৎপরতা এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত দেয়। বেলুচিস্তান প্রদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পাকিস্তানের সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী এই সংকট সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে দুর্গম এলাকা এবং বিদ্রোহীদের শক্ত প্রতিরোধ উদ্ধার কার্যক্রমকে কঠিন করে তুলছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বশেষ আপডেটের জন্য স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এবং সরকারি সূত্র পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।